শরীফুল ইসলাম ॥
অবজ্ঞা, অবহেলা, আর নানা অনিয়মে চলছে এখন আড়ইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ডাক্তার না পেয়ে চিকিৎসা না নিয়েই প্রতিদিন শহর এবং গ্রাম থেকে আসা অনেক রোগীকে চলে যেতে হচ্ছে বাড়ি ঘরে। গত ২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এমনই চিত্র দেখা গেলো হাসপাতালে ডিউটিরত বিভিন্ন ডাক্তারদের কক্ষের সামনে। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালের নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলার ক’জন ডাক্তারের কক্ষের সামনে শহর এবং গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তখন বেলা সাড়ে ১০টা বাজে। খবর নিয়ে জানা যায়, ১০৫নং কক্ষ, ১০৩, ২০৮, ২০৩, ২০২, ২২০, ২০৭, ২০৪নং কক্ষসহ ওই সকল ডাক্তারদের কক্ষে তখনো কোনো ডাক্তার আসেনি। তাই ওইদিন কোনো কোনো রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষায় থেকে ডাক্তার না পেয়ে চিকিৎসা সেবা না নিয়েই চলে যেতে হয়েছে। কেউবা আবার এখানে ব্যর্থ হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে এবং ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তারা হাসপাতালের ওইসব ডাক্তারের কক্ষের সামনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে তীর্থের কাকের ন্যায় ডাক্তারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
সময় মতো ডাক্তার না পেয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার খোরশেদ আলম নামে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার হাঁটু ব্যাথার জন্য ১০৪ নাম্বার কক্ষের ডাক্তারকে দেখিয়েছি। তিনি আমাকে তিনদিন পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছেন। কিন্তু আমি তিনদিন পর আজ সকাল ৯টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করছি, এখনো ডাক্তার আসেননি। উপরে উল্লেখিত নম্বরের কক্ষগুলোতে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেলো, ঘড়িতে বেলা সাড়ে ১১টা হলেও ডাক্তারদের হাসপাতালে ডিউটিতে আসার কোনো নাম-গন্ধ নেই। খবর নিয়ে জানা যায়, কিছু কিছু ডাক্তার প্রাইভেট রোগী দেখে অথবা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ সেরে তারপর ডিউটিতে আসেন। ডাক্তারদের ডিউটিতে আসার এ অনিয়ম প্রতিদিনকার নিয়মে পরিণত হয়েছে। অপর দিকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডিউটি করা নার্সদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। অনেক নার্সই টাকা না পেলে ভর্তি হওয়া রোগীকে ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে চান না এবং অনেক রোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিশেষ করে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড এবং মহিলা ওয়ার্ডে বেশি চলে এইসব অনিয়ম।
এ ব্যাপারে একাধিক রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে এখন নার্সরা অনেক অনিয়ম করছে। তারা রোগী এবং রোগীর লোকজনের কাছে থেকে টাকা পেলে ভালোভাবে সেবা-যতœ করে। আর যারা টাকা-পয়সা দিতে পারে না তাদের চিকিৎসা চলে অবহেলিতভাবে। অনেক সময় দেখা যায় কিছু নার্সকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলে সিটের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় শুধু ডাক্তার, নার্সদের অনিয়মই নয়, এর বাইরেও রয়েছে ডাক্তারদের সহকারী নামে কিছু দালালের দৌরাত্ম্য। এ ক্ষেত্রেও অনেকের কাছে জানা যায়, যে সব রোগী টিকেট করে চিকিৎসা নিতে ডাক্তারদের অপেক্ষায় কক্ষের সামনে সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তখন বিভিন্ন কক্ষের ডাক্তারদের সহকারীদের কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই তারা তার নামটি আগে ডেকে সিরিয়াল ভঙ্গ করেন। হাসপাতালের তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি ইউনিটের নির্দিষ্ট তিনটি বেড নেই। যদিও আগে ওই স্থানে তিনটি বেড ছিলো, কিন্তু তা অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে বেডগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এক-দেড় মাসের মতো সময় পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত পুনরায় সেখানে কোনো বেড দেয়া হয়নি। তাই ফ্লোরের এক্সট্রা বিছানায় শুয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
এভাবেই প্রতিদিন অবজ্ঞা-অবহেলা আর নানা অনিয়মে চলছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালে যেনো কোনো রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন এবং ডাক্তার, নার্স ও দালালদের এসব অনিয়ম যেনো নিয়মে ফিরে আসে সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন চাঁদপুরের সচেতন মহল।