মুহাম্মদ মাসুদ আলম:
চলমান শুস্ক মৌসুমেও চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রাম থেকে শুরু করে চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাটসহ প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেঘনার ভাঙ্গন থেমে নেই। এ মৌসুমে মেঘনার ভাঙ্গন অতীতে দেখা না গেলেও অতিরিক্ত বাতাস আর নদীতে উত্তাল ঢেউ থাকায় ইদানিং আবার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফসলী জমি ক্রমান্বয়ে ভেঙ্গে বসতবাড়ীর কাছে আসতে শুরু করেছে মেঘনা। এসব এলাকার মানুষ বহু ভাঙ্গনের শিকার হয়ে, সহায় সম্পত্তি হারিয়ে কোন রকম বসতভিটা নিয়ে বসবাস করছে। কৃষি আর মৎস্য শিকার করেই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করে। মেঘনার নতুন ভাঙ্গনে কখন তাদের বসতঘরগুলো নদীগর্ভে চলে যায় এমন আতংকেই কাজ করছে তাদের মনে। হানাচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলো খুবই ভারাক্রান্ত মনে এসব কথা জানান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নে অবস্থিত চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাট এলাকাটিও মেঘনার ভাঙ্গনে দীর্ঘদিন হুমকির মুখে। কয়েকবার ভাঙ্গনে দোকানপাটসহ কয়েকটি বাড়ী নদী গর্ভে চলে গেছে। ফেরিঘাট রক্ষায় সরকারের পানি উন্নয়নবোর্ড কর্তৃপক্ষ ইদানিং কিছু জিউটেক্সটাইল ব্যাগে বালু ভর্তি করে আপাতত পাড় সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু বর্ষা আসলে এ সংরক্ষণ না থাকার সম্ভাবনাই বেশী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ জুলাই ২০১৩ইং তারিখের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিগত ৫বছরে দু’টি প্রকল্পে কাজ করেছে। একটি প্রকল্প ছিলো “ মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকায় (হাইমচর এবং বাঞ্চারামপুর উপজেলার বাম্পিয়া রক্ষা প্রকল্প)” এ প্রকল্পের হাইমচর অংশে পাড় সংরক্ষণ কাজ হয়েছে ৭৮৯৮.৫ মিটার। এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত সর্বসাকুল্য ব্যয় হয়েছে ১শ’ ৬ কোটি ১৩লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অপর প্রকল্পটি হচ্ছে- “চাঁদপুর জেলার পুরাণ বাজার সংলগ্ন ইব্রাহীমপুর-সাখুয়া এলাকার মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প সংরক্ষণ প্রকল্প” এ প্রকল্পে কাজ হয়েছে ৫৬৭৬.২৬ মিটার। এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত সর্বসাকুল্য ব্যয় হয়েছে ১৩৫ কোটি ৪২লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এ দু’টি প্রকল্প বাঁধ হওয়ার কারণে প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার শত শত বসতবাড়ী, ফসলী জমি, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরাণ বাজার রক্ষা পেয়েছে।
সরকারের এত বড় সাফল্যের পাশপাশি দু’টি প্রকল্পের মধ্যবর্তী এলাকায় বাঁধ না হওয়ায় এখনো বড় ধরনের ক্ষতির হুমকিতে ওই এলাকার বাসিন্দারা এবং সিআঁইপি বাঁদের বাদ বাকী অংশ। বর্ষা এলেই আতংকে দিন কাটে তাদের। এছাড়াও হরিণা ফেরিঘাটের কারণে এলাকাটির গুরুত্বও অনেক বেশী। ফেরিঘাটটিও আন্তঃজেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সরকারের একটি যুগন্তাকারী প্রদক্ষেপ।
গোবিন্দয়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ ঢালী জানান, এ এলাকায় গত ২০ বছরে বহুবার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব ভাঙ্গনে প্রায় ৩০টি বাড়ী নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন অনেক মানুষ রাস্তার পাশে ও আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন।
আরেক বাসিন্দা লতিফ শেখ জানান, আমাদের এ অঞ্চলে ভাঙ্গন নতুন নয়। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু আমাদের ভাঙ্গন রোধে কোন সরকারই এগিয়ে আসেনি।
নদীর পাড়েই রয়েছে একটি বসত বাড়ী। ওই বাড়ীতে থাকা বেশ কয়েকজন মহিলা জানান, “স্যার আমাগো বাড়ী কয়েকবার ভাঙ্গছে। আবার ভাঙ্গলে আমরা জামো কই। সরকার আমাগো সাহায্য দিলে, আমাগো দিগে চাইলে, কোন রকম বাইচ্ছ্যা থাকতে পারুম। আমাগো এলাকায় মন্ত্রী আইছিলো, বলছে হেয় যদি আবার পাশ করে, তইলে আমাগো এলাকায় বান দিবো। এখন আর খবর নাই”।
নদী ভাঙ্গন রক্ষায় সরকারের কোন প্রদক্ষেপ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ জানান, হরিণা ফেরিঘাটসহ ওই এলাকা ভাঙ্গন রোধে ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র তৈরী করে চাহিদা দিয়ে পাঠিয়েছি। প্রকল্প অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
শিরোনাম:
শনিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১২ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।