অনলাইন ডেস্ক-
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আল্টিমেটাম, হরতাল, সহিংসতা, বিদেশী কুটনৈতিকদের নানামুখি তৎপরতায় সাধারন মানুষের মধ্যে শঙ্কা, আদৌ নির্বাচন হবে কিনা? তবে এরই মাঝে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নিজেদের দলীয় প্রার্থির তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। ১০ নভেম্বর থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০০ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত করেছেন শেখ হাসিনা। ওইসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাও চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের তালিকায় শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামও রয়েছে।
যেসব সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না তাদের বিষয়টি জানিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য পরিবর্তনকে নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ১০ নভেম্বর থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়পত্র বিক্রি শুরু হবে। এরপর দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বৈঠক করে এদের মধ্য থেকে বাঁছাই করবেন। প্রার্থিতার তালিকা তৈরিতে আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা তা এখনো পরিস্কার না হওয়ায় ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার বিষয়টি স্বয়ং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাই তত্ত্বাবধান করছেন। এক্ষেত্রে তিনি সরকারী ২টি গোয়েন্দা সংস্থা, নিজের ব্যক্তিগত টিমের জরিপ এবং বাইরের দু’টি জরিপ রিপোর্টের সমন্বয়ে প্রার্থী বাছাই করছেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কামিটি সূত্রে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন করে যাদের দেয়া হচ্ছে তারা হচ্ছেন পাবনা-১ আসনে অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ, চাঁদপুর-৩ সুজিত রায় নন্দী, ময়মনসিংহ-৩ আলী আহমদ খান পাঠান সেলভী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, যশোর-২ এবিএম আহসানুল হক, সাতক্ষীরা-৩ লে. কর্নেল (অব.) জামায়েত আলী, ফরিদপুর-৩ সায়মা হোসেন পুতুল, দিনাজপুর-৪ মিজানুর রহমান মানু, মৌলভীবাজার-৪ রনধীর দেব, ঠাকুরগাঁও-১ এ্যাডভেকেট ইন্দ্র নাথ রায়, ঢাকা-১৮ হাবীব হাসান, রাজশাহী-১ মতিউর রহমান, সিলেট-১ বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, ময়মনসিংহ-১০ এ্যাডভেকেট কাওছার আহমেদ, খুলনা-৫ প্রফেসর ড. মো. মাহাবুব উল ইসলাম, শেরপুর-৩ এসএম ওয়ারেছ নাইম, বগুড়া-১ ড. সিদ্দিকুর রহমান, শরীয়তপুর-১ আ. রব মুন্সি, বরিশাল-২ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, সুনামগঞ্জ-১ এ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, মেহেরপুর-১ ফরহাদ হোসেন, নেত্রকোনা-২ শামছুর রহমান লিটন, নেত্রকোনা-৩ ইফতেখার উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া-১ এ্যাডভোকেট সরোয়ার জাহান বাদশা, ময়মনসিংহ-১১ কাজিমুদ্দিন আহমেদ ধনু, গাজীপুর-৩ ইকবাল হোসেন সবুজ, গাইবান্ধা-২ সৈয়দ শামছুল আলম হিরু,পাবনা-৩ এ্যাডভেকেট শাখাওয়াত হোসেন, রংপুর-৬ শেখ হাসিনা/সজীব ওয়াজেদ জয়, নরসিংদী-৩ সিরাজুল ইসলাম মোল্ল্যাহ, রাজশাহী-৫ জিএম হিরা বাচ্চু, টাংগাইল-২ আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, পাবনা-৫ ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, ঝিনাইদহ-৩ মো. সাজ্জাতুল জুম্মা, সিরাজগঞ্জ-৩ আমজাদ হোসেন মিলন, সিরাজগঞ্জ-৪ সেলিনা মির্জা মুক্তি, বাগেরহাট-২ শেখ হেলাল উদ্দিন, নীলফামারী-৪ মাহফুজার রহমান, সাতক্ষীরা-১ এ বি এম নজরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম-৪ মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, নড়াইল-২ এ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র বোস, হবিগঞ্জ-১ শাহনেওয়াজ গাজী (মিলাদ গাজী), ঢাকা-৪ ড. আওলাদ হোসেন, কুমিল্লা-১০ ড. কামরুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ মাহমুদ হাসান সুমন, যশোর-৩ শাহীন চাকলাদার, মানিকগঞ্জ-১ নাইমুর রহমান দুর্জয়, ঢাকা-৬ আলহাজ্ব সাইদ খোকন, টাঙ্গাইল-৮ আব্দুল মালেক মিয়া, চট্টগ্রাম-১০ খোরশেদ আলম সুজন, চাঁদপুর-২ মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, কক্সাবাজার-৪ অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা-৮ আব্দুল হাকিম, মুন্সিগঞ্জ-২ ইঞ্জিনিয়ার কাজী আব্দুল ওয়াহিদ, দিনাজপুর-৬ শিবলী সাদিক, চুয়াডাঙ্গা-১ আজিজুল ইসলাম আজাদ, হবিগঞ্জ-৩ ড. রেজা কিবরিয়া, মুন্সিগঞ্জ-১ মহিউদ্দিন আহমেদ, পঞ্চগড়-১ আলহাজ্ব মনির হোসেন, রাজশাহী-৩ মোহাম্মদ আলী, সুনামগঞ্জ-৪ নুরুল হুদা মুকুট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ মাহামুদুর রহমান বেনজু, নেত্রকোণা-৪ শফি আহমেদ, যশোর-৫ স্বপন ভট্টাচার্য, পিরোজপুর-১ এ্যঅডভোকেট শ.ম. রেজাউল করীম, নওগাঁ-৩ এ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদ, পিরোজপুর-৩ সাদেকুর রহমান, ভোলা-৩ মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন, বগুড়া-৫ মজিবুর রহমান মজনু, মুন্সিগঞ্জ-৩ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম-১১ শামসুজ্জামান চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ আব্দুর রউফ।
এর বাইরে আরো অন্তত ২৬/২৭ টি আসনে প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাও প্রায় চুড়ান্ত। চলছে শেষ মুহুর্তের বিশ্লেষণ। বাকি আসনে আগের প্রার্থীরাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে সুত্রটি জানিয়েছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে পাল্টে যাবে অনেক হিসাব নিকাশ। সেক্ষেত্রে কিছু আসনে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার গুডবুকে থাকলেও নানা কারণে শেষ মুহুর্তে অনেকের মনোনয়ন অনিশ্চিত হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এইচ টি ইমাম বলেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা প্রাধান্য দিচ্ছেন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীদের। দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন না দিয়ে একক নির্বাচন করলে সেটা দেশের সুশীল সমাজ ও বর্হিবিশ্বও ভাল নজরে দেখবে।