শরীফুল ইসলাম
কিশোরীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন শেষে চুরির অপবাদ দিয়ে মাথার চুল কেটে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে ও মিথ্যে অপবাদেও বোঝা মাথায় নিয়ে মেয়েটি এখন দিশেহারা। স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে তার।
সিনেমা-নাটকের কাহিনীকে হার মানানো চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চরবড়ালী গ্রামে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ ওই মেয়ের হতদরিদ্র মা-বাবার। অথচ মেয়েটির স্বামীর পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি তারা আমলেই নিচ্ছে না।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ওই গৃহবধূ উত্তর চরবড়ালী গ্রামের এক দিনমজুরের মেয়ে (১৪)। তিন বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
নির্যাতিতা বালিকাবধূ জানায়, মাদ্রাসায় যাতায়াতের পথে পাশের গ্রাম উত্তর চরপাড়া খাঁন বাড়ির ওহাব আলী খাঁনের ছোট ছেলে রাকিব খাঁনের নজরে পড়ে সে। রাকিব বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিলেও মেয়েটি তাতে সাড়া দিচ্ছিল না। এতে প্তি হয়ে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল মেয়েটিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান রাকিব। মেয়ের অমতে ওইদিনই ঢাকার ধানমন্ডির একটি কাজী অফিসে তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের চারদিন পর তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন রাকিব। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে মেয়েটির ওপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা-মা রাকিবের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি।
মেয়েটি আরো জানায়, গত ২২ আগস্ট রাকিব তাকে নিয়ে একই গ্রামে মামাবাড়ি যান। সেখানে কোহিনুর বেগম নামে রাকিবের এক মামী মেয়েটির নামে চুরির অপবাদ দিয়ে তার চুল কেটে দেন। পরে শিকলে বেঁধে রেখে মারধর করে একপর্যায়ে তাকে রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়।
ওইদিনই মেয়েটি ফরিদগঞ্জ থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করে। কিন্তু অভিযোগ করার ১৫ দিনেও পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো পদপে নেয়নি। এছাড়া প্রভাবশালী হওয়ায় রাকিবের পরিবারের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মুখ খুলছে না। রাকিবের মামী কোহিনুর বেগম চুল কাটার কথা স্বীকার করেছেন।
রাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই মেয়েকে চিনিই না।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মো. মামুনুর রশিদ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি মেয়েটির চুল কেটে থাকে তাহলে তা ঠিক হয়নি।
এদিকে, ঘটনাটি জানানো হলে তদন্ত করে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আমির জাফর। তিনি বলেন, অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযোগের ১৫ দিনেও কোনো ব্যবস্থা না হওয়া প্রসঙ্গে এসপি বলেন, পুলিশের কোনো গাফিলতি আছে কিনা আমি খতিয়ে দেখছি।
মেয়েটির দরিদ্র মা-বাবা জানান, কোথাও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। তাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বিষয়টি পুলিশ বা স্থানীয় লোকজন কেউই আমলে নিচ্ছে না। এখন বিষয়টি নিয়ে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা তার মেয়ের প্রতি অমানবিক এ নির্যাতনের সঠিক বিচার দাবি করেন।