প্রতিনিধি
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে সিআইপি সড়কের উপর অবরোধকারীদের হামলায় স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা ও জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। গুরুতর আহত জেলা ছাত্রলীগ নেতা শাবনুরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা রেফার করা হয়েছে। আর এর জের ধরে গ্রাম থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা চাঁদপুর শহরে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি হামলায় জেলা বিএনপি কার্যালয় ও বাবুরহাটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর গাজীরপুল এলাকায় একটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। বাগাদী চৌরাস্তায় ও বাবুরহাট-মতলব সড়কে যানবাহন ভাংচুর করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে পূর্বে নির্ধারিত হরিণা চৌরাস্তায় ১৩নং হানারচর ইউনিয়ন যুবলীগের এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালীন বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মিছিল সভায় যোগ দেয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের গাজীরপুল নামক স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করছিলো। এ সময় হরিণায় যুবলীগের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে অটোবাইকে করে যাচ্ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাবনুর পাটওয়ারী ও থানা যুবলীগ সদস্য মমিন খান। তাদের বহনকারী অটোরিক্সার উপর অতর্কিত হামলা চালায় অবরোধকারীরা। তাদের মাথায় ও হাতে আঘাত করে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করা হয়। এর মধ্যে শাবনুরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখম করা হয়। তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আনার পর সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে হামলার খবর হরিণা চৌরাস্তায় সভাস্থলে এসে পৌঁছলে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন চান্দ্রা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান খান জাহান আলী কালু বক্তব্য রাখছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত ঐ স্থানে জড়ো হয়। তখন অবরোধকারী বিএনপির লোকজন অন্যত্র সরে যায়। এ সময় উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা রাস্তার পাশে ক�টি দোকানে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে বিএনপি সমর্থক ইব্রাহিম গাজীর মুদির দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাল্টা জবাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দোকানগুলোও হামলার শিকার হয়। সেখানে দ্রুত উপস্থিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি হাজী ওচমান গণি পাটওয়ারী ও জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া নেতা-কর্মীদের মানিয়ে নিয়ে আসেন। প্রায় এক ঘণ্টা সভা বিঘ� ঘটার পর পুনরায় সভার কাজ শুরু করা হয়। পরে শান্তিপূর্ণভাবে সভা শেষ হয়। খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মানিক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি একেবারেই শান্ত হয়ে যায়।
এ ঘটনার জের ধরে শেষ বিকেলে চাঁদপুর শহরের মেথা রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। হামলাকারীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ধ্যার পর বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায় বাবুরহাটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। বাবুরহাট অফিসে অগ্নিসংযোগ ছাড়াও মতলব রোডে বেশ ক�টি যানবাহন ভাংচুর করা হয়। একই সময় বাগাদী চৌরাস্তায় যানবাহন ভাংচুর করে অবরোধকারীরা।
জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি হাজী ওচমান গণি পাটওয়ারী জানান, আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ চলছিলো। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা সমাবেশ বানচাল করতে এবং অঙ্গ-সংগঠনের নিরীহ ২ নেতাকে মেরে ফেলার জন্যে তারা এ হামলা চালায়। তারা এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনার জন্যে তিনি হানারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার গাজী ও তার ভাই-ভাতিজা-ভাগিনাদের দায়ী করে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এদিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ও সেক্রেটারীর বাসভবনে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন চাঁদপুর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন মাঝি। তিনি ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলে দাবি করেন। এদিকে গ্রামের উত্তেজনা শহরে ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। সন্ধ্যার পর পুরাণবাজার লোহারপুল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। পাল্টা মিছিল করার জন্য লোহারপুল এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। এ পরিস্থিতিতে সেখানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।