শওকত আলী
দিন যতই যাচ্ছে চাঁদপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে উত্তাপ ততই বাড়ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এখানে আ’লীগের একক প্রার্থী না থাকায় চাঁদপুরে আ’লীগের নেতাকর্মীরা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে ৪ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করতে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক স্থানীয় এমপি ডাঃ দীপু মনির ঢাকার বাসায় একাধিক বৈঠকেও সমাধান করা যায় নি। ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ’লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আ’লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ স্থানীয় অন্যান্য এমপি ও হেভিওয়েট কয়েক জন নেতার বলয়ের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে তদবির লবিংসহ নানা সমিকরণের কারণে চাঁদপুরে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী ঘোষণা করা যায় নি। শেষ পর্যন্ত সবাইকে নির্বাচন করার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এখানে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় বর্তমানে ৪ জন চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এরা হচ্ছেন আ’লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচিত জেলা আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটোয়ারী, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আ’লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল, সাবেক উপজেলা ও পৌর চেয়ারম্যান মোঃ ইউসুফ গাজী ও সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান।
জেলার ৮৯ টি ইউনিয়ন ও ৭টি পৌরসভায় মোট ভোটার হচ্ছে ১২’শ ৬০ জন। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলর অর্থাৎ ভোটার হচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৩’শ জন। বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোট যিনি আদায় করতে পারবেন তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে এখানকার পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। এ হিসাব নিকাশ করতে কোনো কোনো প্রার্থী বিএনপি নেতা কর্মীদের ধর্ণা ধরছেন। বিএনপি জেলা নেতাদের মাধ্যমে বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের কাছ থেকে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। যেহেতু আ’লীগের ভোট ৪ ভাগ হচ্ছে সে ক্ষেত্রে বিএনপির এসব ভোট অনেকটা ট্রাম্পকার্ড হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। চাঁদপুরে ৫টি নির্বাচনী এলাকার এমপি সরাসরি কোন প্রার্থীকে সমর্থন না দিলেও নেপথ্যে কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভূমিকা রাখছেন বলে এমপিদের ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে। চাঁদপুরে কে হচ্ছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমন সমিকরণ মেলানো কঠিন হলেও ভোট প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী ও আলহাজ্ব অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল। ইতোমধ্যে জেলা যুবলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের বিরাট একটি অংশ আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। অপরদিকে বৃহত্তর দুই মতলব এলাকা থেকে একক প্রার্থী আলহাজ্ব অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুলের পক্ষে ছাত্রলীগ ও আ’লীগের একটি অংশ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। তিনি ছাত্রলীগের সুলতান মোঃ মনসুর-আব্দুর রহমান পরিষদের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী, মোঃ ইউসুফ গাজী ও নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান চাঁদপুর সদর এলাকার বাসিন্দা। অপরদিকে অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এলাকার একক প্রার্থী। জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল জানান, জেলা আ’লীগ কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয়নি। যেহেতু সবাই আ’লীগের নেতা তাই নির্বাচনটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখন দেখার অপেক্ষা সর্বশেষ বিজয়ের হাসিটি কে হাসেন।