প্রতিনিধি
গত দুই মাসেরও অধিক সময়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায়ও ব্যাপকহারে গাছ নিধন হয়েছে। হরতাল-অবরোধকারীরা নির্বিচারে রাস্তার পাশে সরকারি গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করেছে। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক, চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়ক, বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়ক, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়ক, কালিয়াপাড়া-কচুয়া-সাচার সড়কসহ আরো বেশ কিছু আন্তঃউপজেলা সড়কে শত শত গাছ কেটে হরতাল-অবরোধ পালন করা হয়। যার সচিত্র সংবাদ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। অথচ চাঁদপুর বন বিভাগের হিসেবে এই সময়ে জেলার চার উপজেলায় গাছ কাটা হয়েছে মাত্র ৮৯টি। আর এসব গাছ কাটার ঘটনায় এই চার থানায় মামলা হয়েছে ১৩টি, আসামী করা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে ৭২জনকে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে� সদর উপজেলায় এই দুই মাসে ব্যাপক গাছ নিধন হলেও বন বিভাগের হিসেবে এই উপজেলায় দুই মাসে গাছ নিধন হয়েছে মাত্র পাঁচটি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র দু�টি, আসামী অজ্ঞাত।
গত ২৫ অক্টোবর ২০১৩ থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পতনে যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। লাগাতার হরতাল-অবরোধ দেয়া হয় দেশব্যাপী। এই হরতাল-অবরোধ সফল করতে গিয়ে সারাদেশে ব্যাপকহারে গাছ-গাছালি নিধন হয়। বিরোধী দল রাস্তার পাশে সরকারি গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। চাঁদপুর জেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেখা গেছে যে, আঞ্চলিক মহাসড়ক ছাড়াও জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃউপজেলা সংযোগ সড়কগুলোতেও ব্যাপকহারে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়। আর এসব গাছের অধিকাংশই নিধন হয়েছে ওইসব সড়কের পাশে থাকা সরকারি গাছ। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে রেইন্ট্রি, মেহগনি ও আকাশমনি। নিধনকৃত এসব গাছের অধিকাংশেরই কোনো হদিস নেই। মাঝে মধ্যে কিছু গাছ বন বিভাগের লোকজন জব্দ করলেও অধিকাংশ গাছ লাপাত্তা হয়ে গেছে।
চাঁদপুর জেলা সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, গত ২৫ অক্টোবর থেকে জানুয়ারি ২০১৪-এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের সময় চাঁদপুর জেলায় মোট গাছ নিধন হয়েছে ৮৯টি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩টি, আসামী সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৭২ জন। এছাড়া অজ্ঞাত আরো আসামী রয়েছে। এই বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী উপজেলা ভিত্তিক এর পরিসংখ্যান হচ্ছে� কচুয়ায় গাছ নিধন হয়েছে ৮টি, মামলা হয়েছে ১টি, আসামী ৫৪জন; হাজীগঞ্জে গাছ নিধন হয়েছে ২৩টি, মামলা হয়েছে ৪টি, আসামী ১৮জন; চাঁদপুর সদরে গাছ নিধন হয়েছে ৫টি, মামলা হয়েছে ২টি, আসামী অজ্ঞাত এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গাছ নিধন হয়েছে ৫৩টি, মামলা হয়েছে ৬টি, আসামী অজ্ঞাত। বন বিভাগের এই তথ্য কতটুকু বাস্তবসম্মত সেটি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বাস্তবে দেখা গেছে যে, এই দুই মাসে এই চার উপজেলায় শত শত গাছ নিধন হয়েছে। শুধু সদর উপজেলায়ই তো শতাধিক গাছ নিধন হয়েছে। তাছাড়া গাছ কাটার ঘটনা বহুবার ঘটলেও মামলা হয়েছে মাত্র ২টি, তাও আসামী অজ্ঞাত। বন বিভাগের এই তথ্যে সচেতন মহল হতাশ হয়েছে। তাদের কাছে এই তথ্য হাস্যকরই মনে হয়েছে। শান্তিপ্রিয় সচেতন জনগণ মনে করে, গাছ নিধন একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধ দমনে এবং অপরাধীদের চিিহ্নত করতে যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগের এ অবস্থা হয় তাহলে তো অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে আরো দ্বিগুন উৎসাহে এ অপরাধ চালিয়ে যাবে।