চাঁদপুরে বিষপানে কিশোর রাকিবের আত্মহত্যার চেষ্টা, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতলে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২ নং চান্দ্রা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মধ্য বাখরপুর গ্রামে জোরপূর্বক ২১বছর বয়সী নাবালক কিশোরকে ১৪ বছর বয়সী নাবালিকা কিশোরীর সাথে বাল্য বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিয়ের চার মাস যেতে না যেতেই কিশোর রাকিব গাজীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে শুরু করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। শ্বশুরবাড়ি নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে অবশেষে শুক্রবার দুপুরে কিশোর রাকিব বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের স্বজনরা।
মধ্যম বাখরপুর মৃত রুহুল আমিন গাজীর ছোট ছেলে রাকিব গাজীকে জোরপূর্বক আটকে রেখে এই বাল্যবিয়ের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। অবশেষে পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাকিবকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখান থেকে পুনরায় ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে সে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালের বেডেতে ছটফট করছে। বিষপানে আত্মহত্যার পূর্বেই রাকিব এই ঘটনার সাথে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও যারা জড়িত রয়েছে তাদের নাম একটি কাগজে চিরকুট লিখে গেছে। রাকিবের পরিবারের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ তাজু গাজীর ১৪ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়ে তুশি আক্তারের সাথে রাকিবের এক বন্ধুর দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক ছিল । তাদের উভয়ের সাথে সম্পর্কের বিরোধ ঘটায় কারণে রাকিব তুশি আক্তার এর সাথে সে বিষয়ে কথা বলতে যায়। কিন্তু তুশি আক্তার তার প্রথম প্রেমিককে বাদ দিয়ে সুকৌশলে সে রাকিবের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। মাত্র দুই মাসের সম্পর্ক হওয়ার পর তুশি আক্তারের পিতা মোঃ তাজু গাজী এলাকার কিছু দালাল চক্রদের সাথে নিয়ে রাকিব গাজীকে ফোন করে তার বাসায় আসতে বলে।
পরে রাকিবকে ধরে নিয়ে এসে জোরপূর্বক আটকে রেখে তারা ১০ লক্ষ টাকা কাবিন করে তার অমতে বাল্য বিয়ে করিয়ে দেয়। রাকিবের দুই ভাই বিদেশ থাকায় সেই সুযোগ পেয়ে এলাকা দালালচক্র সুকৌশলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই বাল্যবিয়েটি করিয়ে দেয়। তারপরই শুরু হয় রাকিবের সাথে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। শ্বশুরবাড়ির মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে রাকিব বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানায় তার পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে তুশি আক্তারের মা জানান, দুজনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে অবশেষে বিয়ে হয়। তবে মেয়ে একটু উত্তেজিত হওয়ায় ছেলে তার সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা চেষ্টা করে। বিয়ের সময় এলাকার মাতব্বর সেলিম পাটোয়ারী ,জসিম পাটোয়ারী, তানভীর পাটোয়ারী, ছগীর পাটোয়ারী সহ বেশ কয়েকজন থেকে দায়িত্ব নিয়ে এই বিয়েটি করিয়েছে। কি কারণে এমনটি হল তা জানা নেই। এসব বিষয় তুলসীর বাবা সবকিছু বলতে পারবে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান খানজাহান আলী কালু পাটোয়ারী জানান, তাজু গাজীর মেয়ে তুশি আক্তারের বয়স কম তা আমরা সবাই জানি। মেয়ের বাবাকে বাল্যবিয়ে না দেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি তারপরও সে এমনটি করেছে। বাল্যবিয়ে আইনগত অপরাধ এর সাথে যারা জড়িত রয়েছে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।