বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। সব পূর্বাভাস এবং ধারণার চেয়েও বেশি বেড়েছে তেলের দাম।
বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দর ১০০ ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। এরই মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম মঙ্গলবার বেড়ে হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৯৪ দশমিক ৪৪ ডলার। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দর ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ১০ ডলারে। এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল গড়ে ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ছে না। এর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা যুক্ত হয়েছে। তেলের দাম ১০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাছাড়া তেলের বাজারের সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের বাজারেও অস্থিরতা চলছে।
কেবল ইউরোপ বা আমেরিকা নয়, এশিয়ার দেশগুলোতেও পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। জাপানে যেখানে ১৯৮০ দশকের মন্দার পর ধারাবাহিকভাবে জিনিসপত্রের দাম কমে আসছিল বলে মূল্যস্ফীতি ছিল ঋণাত্মক, সেই দেশটিতেও গত ডিসেম্বরে প্রায় ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত ৪০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। এদিকে জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লন্ডনে বিক্ষোভ করেছে মানুষ। ইউরোজোন, অর্থাৎ ১৯টি দেশে জানুয়ারি মাসে গড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক এক শতাংশ। ১৯৯৭ সালে ইউরো চালু হবার পর এটাই সর্বোচ্চ। ভারতেও টানা কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে চলেছে, সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বিশ্ব জুড়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং তেলের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকের পর এই প্রথম এত দ্রুতগতিতে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। আর মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতি সহসাই কমছে না। জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সরবরাহ সংকটে সারা বিশ্বেই বেড়েছে শিল্পের কাঁচামালের দাম। খনিজ তেলের মতো যেসব জ্বালানি আছে সেগুলোর দাম বাড়লে তার সঙ্গে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বাড়ে, কারণ খনিজ জ্বালানি অন্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।