খোলাবাজারসহ ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সেও বেড়েছে ডলারের দাম। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ডলারের দাম এত বেড়েছে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে ১১২ টাকা হয়।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৩০ পয়সা কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার আন্ত ব্যাংকে প্রতি ডলার ৯৫ টাকা (৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা) দরে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের পরও ডলারের সরবরাহ কম থাকায় খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। মতিঝিল এলাকার খোলাবাজারের একাধিক ডলার বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এর আগে ডলার কিনতে কোনো কাগজ দেখাতে হতো না খোলাবাজারে। এখন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকেও ডলার কিনতে দেখাতে হচ্ছে পাসপোর্ট।
গুলশান-২-এর কর্নিকা মানি এক্সচেঞ্জের দায়িত্বরত কর্মী জানান, সোমবার সর্বোচ্চ ১১৫ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। তবে এখন ডলার নেই। চাইলে অন্য হাউস থেকে এনে দিতে হবে।
গতকাল আন্ত ব্যাংকে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৯৫ টাকা। কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা পর্যন্ত মূল্যে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।
মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন ডলারসংকট আগের মতোই রয়েছে। অভিযান শুরুর পর থেকে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এখন চাইলেও যে কেউ এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে ডলার নিতে পারছে না। এখন অবশ্যই পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে ১১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির কারণে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। গত রবিবার দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯.৬৬ বিলিয়ন ডলার।
ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণে চিঠি
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ট্রেজারি অপারেশনে অতিরিক্ত মুনাফা করায় পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টাকার মান আরো কমল
ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো ৩০ পয়সা কমাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে গতকাল ডলার বিক্রি করেছে ৯৫ টাকা দরে। অর্থাৎ আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী এটিই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এক দিন আগেও এ দাম ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। সেই হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে আট টাকা ৫৫ পয়সা।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন দামে ১৩৯ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।