প্রতিনিধি
“ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
চিকিৎসার নামে হয়রানির এক ভয়াবহ অভিযোগ তুলে ধরে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এর বিচার চাইলেন এক প্রসূতির স্বামী রিয়াদ হোসেন। গতকাল সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে তারা ফরিদগঞ্জের কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে কর্মরত নারী ডাক্তারদের আচরণে ও প্রসূতিকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে অনিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি ঠেলে দেয়ার হয়রানির চিত্র তুলে ধরেন।
গাব্দেরগাঁও গ্রামের লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে, রূপসা বাজারের ব্যবসায়ী ও প্রসূতির স্বামী রিয়াদ হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ১ অক্টোবর তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী পারভীন সুলতানার প্রসব বেদনা উঠলে তার মামী শাহানারাকে সঙ্গে নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ ডাঃ পরেশ চন্দ্র পালের স্ত্রী রঞ্জু রাণী পালের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। রঞ্জু রাণী যথারীতি পারভীনকে দেখে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা শুরু করে দেন এবং বলেন আজই ডেলিভারি করাতে হবে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার দিকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করেন তার কাছে নেয়ার আগে অন্য কোনো ডাক্তার দেখিয়েছেন কিনা। হ্যাঁ বলার সাথে সাথে তিনি পারভীন এবং তার মামী শাহানারার সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং বলেন এখানে রোগীর চিকিৎসা হবে না, রোগীকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান। উপায়ান্তর না পেয়ে পারভীনের মামী তাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান। তারপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাঃ শায়লা জাহান শিমুকে কন্ট্রাক করার পর তিনি এসে পারভীনকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন তাকে এই মুহূর্তেই অপারেশন করতে হবে, ঔষধের স্লিপ ধরিয়ে বলেন তার জন্য ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হবে। তড়িঘড়ি রক্তের ব্যবস্থা করেন। এ সময় পারভীনের আত্মীয়স্বজনরা রক্ত দিতে চাইলে কোনো পরীক্ষা না করেই বলেন আপনাদের রক্ত দূষিত ওই রক্তে হবে না, তাকে চাঁদপুর থেকে রক্ত কিনে দিতে হবে টাকা দেন। এক পর্যায়ে তিনি জানতে চান পারভীনকে কোনো ডাক্তার দেখিয়েছেন কিনা। হ্যাঁ বলার সাথে সাথে তিনিও ক্ষেপে গিয়ে বকাঝকা করে বলেন, এ রোগীর চিকিৎসা আমাকে দিয়ে হবে না। রোগীর লাইফ সাপোর্ট লাগবে তাকে এখনই মিডল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন ফরিদগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে চাঁদপুর সদরের মিডল্যান্ড হাসপাতালে প্রেরণ করে। মিডল্যান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পারভীনের শরীরে দু ব্যাগ রক্ত পুশ করে। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ বলে রোগীর অবস্থা বেশি ভালো না তাকে যতদ্রুত সম্ভব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এমতাবস্থায় পারভীনকে নিয়ে মতলব হয়ে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পৌঁছলে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই সহজ-স্বাভাবিকভাবেই পারভীন সন্তান প্রসব করে। সন্তান প্রসবের পর পুনরায় পারভীনকে নিয়ে মিডল্যান্ড হাসপাতালে গেলে তারা জানায়, তাকে ফরিদগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান। ফরিদগঞ্জ সেন্টালে নিলে তারা জানায়, সন্তান যেহেতু পথে প্রসব করেছে সেহেতু আমাদের করার কিছু নেই। এক পর্যায়ে কোনো উপায়ান্তর না দেখে ভোর ৫টার দিকে তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক মা ও শিশুকে দেখে বলেন ওরা উভয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ ও ভালো আছে তাদের বাড়ি নিয়ে যান।
তিনি সংবাদকর্মীদের কাছে প্রশ্ন রেখে জানান, যেখানে আমার স্ত্রী সহজ স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করলো সেখানে এসব মহিলা ডাক্তাররা আমার স্ত্রীকে চিকিৎসার নামে প্রায় ১৯/২০ হাজার টাকা খরচের পাশাপাশি খারাপ আচরণ ও হয়রানি করেই ক্ষান্ত হয়নি তাকে অনিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি ঠেলে দেয়ার নামই কি চিকিৎসা সেবা! যদি তা না হয় তাহলে আমাদেরকে এতো হয়রানি করলো কেন! আমি এসব মহিলা ডাক্তার ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এক প্রশ্নের জবাবে রিয়াদ হোসেন বলেন, এক চিকিৎসকের কর্তব্য হলো রোগীকে সঠিক পরামর্শ দেয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এ তিনটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নিকট থেকে এর কিছুই পাইনি।
প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুনুর রশিদ পাঠানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক নুরুন্নবী নোমানের পরিচালনায় এ সময় প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ১৫নং রূপসা (উঃ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া ও বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা টেলু।