ডায়াবেটিস রোগীদের সরকার বিনামূল্যে ইনসুলিন দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ আমরা বিনাপয়সায় মানুষকে দিই। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনও বিনাপয়সায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ রোগ থেকে মানুষ যাতে মুক্তি পায় সে ব্যবস্থাই নিয়েছি আমরা।’ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। গাজীপুরের তেতুইবাড়ীর কলেজ প্রাঙ্গণে গতকাল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় জনগণের সেবা করে এবং আমরা সময়োচিত পদক্ষেপ নিই। ২০০৯ থেকে ২০২৩—অন্তত দাবি করতে পারি যে বাংলাদেশটাকে বদলে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, শিক্ষার হার বাড়াতে পেরেছি। শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কমিয়েছি, জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি স্বাস্থ্যসেবা।’
কভিড মহামারীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি। মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তাই আমরা অধিক দামে খাদ্য কিনে অল্প দামে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আবার যারা একেবারেই কর্মে অক্ষম তাদের জন্য বিনাপয়সায় খাবার দিচ্ছি। প্রায় এক কোটি বিশেষ পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি, যার মাধ্যমে মাত্র ৩০ টাকা দামে চাল কিনতে পারবে। সেই সঙ্গে তেল, ডাল বা রোজার সময় প্রয়োজনীয় জিনিস ছোলাসহ অন্যান্য পণ্য দিচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিজের দেশে, নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে, নিজের আমিষের ব্যবস্থা করে খাদ্যনিরাপত্তা বা পুষ্টির নিশ্চয়তা—এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তার জন্য কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিই। এমনকি বিদ্যুতের দামেও সাধারণ মানুষের জন্য ভর্তুকি দেয়া হয়। এভাবেই আমরা কিন্তু সেবা করে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যশিক্ষা খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের ৩২টি স্নাতকোত্তর চিকিত্সাপ্রতিষ্ঠানের ২২টিই আমাদের সরকারের প্রতিষ্ঠা করা। ২০০৯ সালে ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মাত্র দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ পেত। গত ১৪ বছরে অর্থাৎ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সে সুযোগ আমরা বাড়িয়েছি। ২৩টি নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ফলে বর্তমানে চার হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারছে। তাছাড়া ৪৭টি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। মানসম্পন্ন চিকিত্সাশিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।’
প্রতিটি বিভাগেই একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ১৯৯৮ সালে আমরাই দেশে প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপন করেছিলাম, সেটাকে আরো উন্নত করে দিচ্ছি। শুধু চিকিত্সাসেবা না, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলছি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি বিভাগেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। এরই মধ্যে চারটি করে দেয়া হয়েছে।’
নার্সিংয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জনগণের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবেন। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প উপাধিতে ভূষিত বিশ্বের খ্যাতনামা নার্স ফ্লারেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা। তিনি কিন্তু নিজের জীবনকে উত্সর্গ করেছিলেন মানুষের সেবা করতে। তখনকার দিনে তো অত বিদ্যুৎ ছিল না, একটা ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে রোগীদের সেবা দিতেন তিনি। সেটা মনে রাখতে হবে। তবে আজকে আর কুপি বাতি নিয়ে চলতে হবে না, বিদ্যুৎ আমরা দিয়ে দিয়েছি সব ঘরে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জানান, তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল জাতির পিতার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ ট্রাস্ট বিভিন্ন সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে ট্রাস্টের মাধ্যমে সারা দেশে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিশেষায়িত এ হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠাও ট্রাস্টের একটি মানবিক উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরেকটা পরিকল্পনা আছে, এ হাসপাতালের সঙ্গে যেহেতু নার্সিং কলেজ আগেই করে দিয়েছি, আমরা একটি মেডিকেল কলেজও স্থাপন করব এখানে। জায়গা আমাদের নেয়া আছে, আর্থিক সংগতি এলে আমরা এখানে মেডিকেল কলেজ করে দেব। এ অঞ্চলের মানুষ যাতে নিয়মিত সেবা পায়, সেবা দেয়াটাই হচ্ছে আমাদের কাজ আর আমরা সেটাই করে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের সিইও মো. তৌফিক বিন ইসমাইল। সমাপনী বক্তা ছিলেন মালয়েশিয়া কেপিজে হেলথকেয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ইমেরিটাস দাতো ডা. লোকমান সাইম।