গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দায়ের এ মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ গতকাল সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজওয়ানুর রহমান।
ড. ইউনূস ছাড়াও মামলায় অন্য আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পাঁচ পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী ও অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও সংগঠনটির প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ জন কর্মচারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ১১০টি মামলা করেছিলেন। এর মধ্যে শ্রম আদালতে ১০৪টি ও হাইকোর্টে ছয়টি। সব মিলিয়ে মোট ৪৩৭ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল এসব মামলায়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে মামলা চলার পর ২০২২ সালের মে মাসে আদালতের বাইরে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে ১১০টি মামলার সবক’টি প্রত্যাহার করা হয়।
দুদকের মামলার বিষয়ে মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগসংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। এর সূত্র ধরেই গত বছরের ২৮ জুলাই দুদক অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছরের আগস্টে কয়েক দফায় গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ উঠে আসে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘অনুসন্ধানকালে অভিযোগসংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্ত পর্যায়ে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত পরবর্তী সময়ে জানতে পারবেন।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সেটলমেন্ট চুক্তি হয় ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল। এরপর ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক হিসাব খোলার আগেই সেটলমেন্ট চুক্তিতে সেটিকে দেখানো হয়েছে। এজন্য সেটলমেন্ট চুক্তিকে ভুয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে মামলার নথিতে। মামলায় আরো অভিযোগ তোলা হয়, লভ্যাংশ বিতরণের আগে শ্রমিকদের না জানিয়ে তাদের পাওনা টাকা বেশ কয়েকজন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই এমন কাজ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।