জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় রায়ের দিন আজ ধার্য রয়েছে। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।
তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পলাতক আছেন। এ কারণে তারা মামলায় আইনি লড়াই করতে পারেননি। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও এর তথ্য গোপন করার জন্য আইনে যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১০ ও তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে। তবে তারেক রহমানের পক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, তার (তারেক) জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার তড়িঘড়ি করে মামলার রায় দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার মো. আছাদুজ্জামান রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় তারেক ও জোবাইদার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদা। এতে তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া মামলায় আসামি করা হয় তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে। এরপর ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। এ মামলায় ইকবাল মান্দ বানুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বর্তমানে তারা পলাতক। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলায় ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এদিকে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার গতির সঙ্গে চলমান আন্দোলনের যোগসূত্র দেখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই লক্ষ করবেন, যখনই তারেক রহমান সাহেব অ্যাক্টিভ হয়েছেন, দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই অতি দ্রুততার সঙ্গে এ মামলা সামনে নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে তাকে সাজা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে আশঙ্কা করছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে সরকারি নীলনকশায় সাজার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকার বিশেষ আদালতে চলমান এ মামলায় অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে সাক্ষ্য নিয়ে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। দেশে লাখ লাখ মামলার জট থাকলেও এ মামলায় মাত্র ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।’
মামলাটি চলার মতো কোনো আইনগত উপাদান নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের সম্পদ বিবরণী ২০০৭ সালে জমা দেয়া হয়েছিল। সেই সম্পদের পুরো আয়কর জমা দেয়া হয়েছিল। জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা এফডিআর। কিন্তু মামলা করার আগের অর্থবছরে ওই এফডিআরের ট্যাক্স রিটার্ন দেয়া হয়েছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন সম্পাদক কায়সার কামাল, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।