গত তিন বছরে ৬১৮ তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। নতুন করে আরো ৩১৯ কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকতে না পেরে কারখানাগুলোর এই পরিণতি হচ্ছে। তবে কারখানা বন্ধ হলেও নতুন করে প্রায় ২৫০ কারখানা উৎপাদনে এসেছে।
গতকাল রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। পোশাক শিল্পকে প্রত্যক্ষ করের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে আসন্ন বাজেটে বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে তিনটি সুপারিশ পেশ করেন সংগঠনটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, এসএম মান্নান, মাহমুদ হাসান খান, মোহাম্মদ নাছির, ফেরদৌস পারভেজ প্রমুখ। বিজিএমইএ সভাপতি জানান, কারখানা বন্ধে হলেও উদ্যোক্তারা ২৮টি পরিবেশ বান্ধব পোশাক কারখানা স্থাপন করেছে। আরও ১১৮টি পরিবেশবান্ধব কারখানা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট ও ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও বিশ্ববাজারে পোশাকের দর পতনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। সিদ্দিকুর রহমান ২০২১ সালে পোশাক রপ্তানি ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি পোশাক শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ হ্রাসকৃত হারে কর আরোপের সুবিধাটি আগামী ৫ বছরের জন্য বৃদ্ধি করার কথা বলেন। রপ্তানিমুখী এই শিল্পের উৎসে কর হার বর্তমানের মতো ০.৩০ শতাংশ রাখা, পোশাক শিল্পের সহযোগী খাতগুলো মূল্য সংযোজন করমুক্ত (মূসক) এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কমুক্ত করার দাবি করেন বিজিএমইএ’র সভাপতি।
সিদ্দিকুর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দরপতন, রিমেডিয়েশন বা পুনর্গঠনের অতিরিক্ত চাপ, গ্যাস সংযোগের সমস্যা, বিদ্যুতের সমস্যা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার, উৎপাদন দক্ষতার অভাবের কারণে এ শিল্পে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখা এবং ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নীতি সহায়তা প্রদানের বিকল্প নেই। এজন্য কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হলো- তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ হ্রাসকৃত হারে করারোপের মেয়াদ আগামী ৫ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা এবং উৎসে কর কর্তনের হার ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ন্যায় করা, রপ্তানি সহায়ক সেবাগুলো ভ্যাটমুক্ত করা এবং অগ্নিনির্বাপক ও আধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ভ্যাটমুক্ত করা। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের মতে, পোশাক শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ করের বোঝা না চাপিয়ে অর্থনীতিতে এর সামগ্রিক অবদানগুলো বিবেচনা করে প্রত্যক্ষ করের আওতামুক্ত রাখলে সার্বিক অর্থনীতি বেশি লাভবান হবে। গ্যাস সংকটের সমাধানের দাবি জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে একটি জ্বালানি নীতি প্রয়োজন। তাহলে আমরা সে অনুযায়ী কারখানা স্থাপন করতে পারব। সব কারখানাকে বিজিএমইএ’র ডাটাবেজের অধীনে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগে গঠিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে বিজিএমইএ প্রতিবছর ৮০ কোটি টাকা দেবে। এ সহায়তার জন্য সব কারখানাকে বিজিএমইএ’র ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। যারা করবে না, তারা আমাদের সেবা পাবে না। ৪ বছরে এ পর্যন্ত ১৪৫০টি কারখানা এ ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আর আগামী জুনের মধ্যে সবাইকে ডাটাবেজে যুক্ত হতে হবে। গ্যাসের অভাবে প্রায় ২০০ পোশাক কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। কারখানার মেশিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এমন পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না যে, তারা এখন থেকে বিদ্যুৎভিত্তিক নাকি গ্যাসভিত্তিক কারখানা করবেন। এ সমস্যা সমাধানে জ্বালানি নীতি প্রয়োজন বলে মনে করে বিজিএমইএ।
সূত্র – মানবজমিন ১৫/৫/১৬