গত ৩/৪ দিন যাবৎ ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাট যেনো তার পুরনো চেহারায় ফিরে এসেছে। ঘাটে এখন উপকূলীয় অঞ্চল নামার এবং লোকাল ইলিশের ছড়াছড়ি।
সরজমিনে মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়ের জমজমাট হাট চলছে। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিঃ সচিব উত্তম কুমার দে জানায়, ৪৮টি গদিঘর রয়েছে। ২০জন আড়তদারের মাধ্যমে ঘাটে আসা মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালানি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। গত ৪ দিনে ইলিশের ব্যাপক আমদানির কারণে ৮ হাজার মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিঃ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আনোয়ার হোসেন গাজী জানায়, লোকাল মাছ কিছু কম, ঘাটের অধিকাংশ মাছ নামার। হাতিয়া, হাইমচরের হাজীমারা, চরভৈরবী, উপকূলীয় এলাকা পাথর ঘাটা, বড়গুনা, মহিপুর, দৌলতখাঁ এলাকা থেকে ডোলের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে লঞ্চে নদী পথে এবং পিকআপ ভ্যান ও সিএনজি স্কুটারযোগে সড়ক পথে এসব মাছ চাঁদপুর আনা হয়।
গত ২ দিন আগে ২০ থেকে ২৫টি ফিসিং ট্রলার ইলিশ বোঝাই হয়ে চাঁদপুর আসায় মাছের চাপ বেড়েছে। তিনি আরো জানায়, মাছের আমদানি বেশি হওয়ায় দামও আগের চেয়ে কমেছে। প্রতি মণ ইলিশ ১৬ হাজার থেকে ২০/২১ হাজার টাকায় আড়তে বিক্রি হয়। ১ কেজি ওজনের উপরে ইলিশ প্রতি মণ ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজি প্রতি ইলিশ ৫শ’ টাকা থেকে হাজার ১২শ’ টাকা।
মৎস্য ব্যবসায়ী শবেবরাত জানায়, প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে অনেক মাছ চাঁদপুর আসতে পারেনি। গত ৩/৪ দিন ঘাটে ইলিশের আমদানি বেশি। দামও কমেছে। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিঃ-এর সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী গাজী জানায়, দেশের মানুষ ইলিশ যাতে খেতে পায়, এজন্য সরকার এলসি বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পায় না। এর কারণ যেই দাম তাতে সাধারণ মানুষ ইলিশ কিভাবে খায়। এদিকে একটি সূত্র জানায়, সরকার এলসি বন্ধ করেছে, চোরাইভাবে ইলিশ দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার হবার জন্য। অনেকে সরকার দলের লোক হওয়ায় এলসি বন্ধ থাকলেও চোরা পথে চাঁদপুর থেকে ইলিশ পাচার করছে। ব্যাপক ইলিশের আমদানি হওয়া স্বত্বেও সিংহভাগ ইলিশ দেশের অভ্যন্তরের নাম করে যশোর, বেনাপোল, হিলি, সাতক্ষীরা, আখাউড়া ও কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায় মাছ চালানি করে। এসব স্থান দিয়ে ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আরেকটি সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের নদ-নদীতে কারেন্ট জালের অধিক ব্যবহারের কারণে লোকাল মাছ বলতে কিশোর ইলিশ বেশি মারা হচ্ছে। উপকূলীয় সমূদ্র এলাকায় বড় সাইজের ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় এবং মাছের দাম বেশি হওয়ায় চাঁদপুর ঘাটে ইদানীং ইলিশের প্রাচুর্যতা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এখানকার অধিকাংশ ইলিশ সড়ক ও রেলপথে অন্যত্র চালান না হলে চাঁদপুরের সাধারণ মানুষ কম দামে ভর মৌসুমে ইলিশের স্বাদ নিতে পারতো। কিন্তু বেশি মাছ আসায় এখানকার মানুষের ভাগ্যে ইলিশ জুটছে না। কারেন্ট জালে ধৃত কিশোর ইলিশ খেয়ে ইলিশের স্বাদ নিচ্ছে।