ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি : ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কারিগরি প্রশিক্ষক মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ভাতার কার্ড করে দেয়ার নাম করে ১শ’ ১৬ জনের নিকট থেকে ৪০ লাখ টাকা ও সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার যোগসাজশে মাহমুদা এই বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা বলছে। ভুক্তভোগীরা একটি লিখিত অভিযোগ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানোর পাশাপাশি গতকাল বুধবার সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
লিখিত অভিযোগকারীদের মধ্যে বিউটি, ফাতেমা, শেফালী, বিনা রাণী ও মমতাজ জানান, মাহমুদা বেগম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার নাম করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির কথা বলে নামে-বেনামে স্কীম দেখিয়ে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তারা আরও জানান, প্রশিক্ষক মাহমুদা ৯নং গোবিন্দপুর, ৪নং সুবিদপুর ইউনিয়ন ও ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তাছাড়া মাহমুদা ভাতা কার্ড করতে ভোটার আইডি লাগবে বলে ২ শতাধিক ব্যক্তির মূল ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গেছেন। মাহমুুদার ফাঁদে পা দেয়া মানববন্ধন করতে আসা বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন হতদরিদ্র ভুক্তভোগী জানান, আমরা এলাকায় যেতে পারছিনা। কেউ ধরে টাকার জন্য, কেউ ধরে আইডি কার্ডের জন্য। আমরা এখন দিশেহার হয়ে পড়েছি।
এদিকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রেবেকা সুলতানা জানান, তার নিকট ৩ জনের বয়স্ক ভাতার কার্ড করার জন্য জনপ্রতি ৩ হাজার ৬শ’ টাকা করে বাড়তি টাকা নিয়েছে মাহমুদা বেগম। ভুক্তভোগীরা আরো জানান, আমরা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নেই, মাহমুদা যেভাবে বলে সেভাবে কাজ করুন। ভুক্তভোগী আয়েশা জানান, তার থেকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ ১০ হাজার টাকা নিয়েছে কার্ড করে দেয়ার কথা বলে। সমপ্রতি মাহমুদা বেগম গা ঢাকা দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। এ ব্যাপারে মাহমুদা বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্র জানা যায়, মাহমুদা বেগমের নামে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করায় ওই অফিসের ভারপ্রাপ্ত সুপারভাইজার মোঃ মমিনুল হককে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মমিনুল হক জানান, তদন্তে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও চাঁদপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের অপর তদন্ত কমিটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ শহীদ উল্যাহর বক্তব্য নিতে একাধিকবার অফিসে গিয়ে না পেয়ে এবং মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার দায়িত্ব একজনই পালন করছেন।