অবশেষে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন)-এর হস্তক্ষেপে ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আবার ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বটে।
ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের জালজালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের সঠিক আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন রাখাসহ উন্নয়নের নামে বরাদ্দ হওয়া সরকারি টাকা কৌশলে আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনায় ঝড় উঠেছে।
উল্লেখ্য, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ ও কর্মকা- নিয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন তার শিক্ষাগত সনদপত্র ও নানা তথ্য জালজালিয়তি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ লাভ করেছে মর্মে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন উক্ত বিদ্যালয়েরই ম্যানেজিং কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য মোশারফ হোসেন নান্নু। গত আগস্ট মাসে এই অভিযোগ দায়েরের পর অবশেষে দুদক আগামী এক মাসের মধ্যে সেটির তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্যে চাঁদপুরের জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছে। দুদকের এই নির্দেশনা পেয়ে অবশেষে জেলা শিক্ষা অফিসার গিয়াসউদ্দীন পাটোয়ারী গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ওই বিদ্যালয়ে আসেন। জেলা শিক্ষা অফিসার সরেজমিনে স্কুলে আসার পূর্বে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল বরাবরে সরকারি স্মারক নং সম্বলিত একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জেলা শিক্ষা অফিসার ২১ নভেম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে বসে তদন্ত করবেন। সে মর্মে প্রধান শিক্ষককে তার সনদপত্রের মূলকপি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার চাকুরি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। একই চিঠির অনুলিপি দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও অভিযোগকারী বরাবরে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে।
এ নিয়ে অভিযোগকারী বলেন, প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজলের বিরুদ্ধে দুদকে দায়ের করা আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে মর্মে আমাকেও জেলা শিক্ষা অফিস অনুলিপি দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দুদকে দাখিল করতে দুদক থেকে জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল দুদকের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে তদন্তের সত্যতা স্বীকার করে গতকাল রোববার বলেন, ২০১৩ সালে এই স্কুলে আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তখন সকল শিক্ষকের প্রাতিষ্ঠানিক যে বেতন ছিল এখন প্রায় ৩ গুণ বেশি বেতন দিচ্ছি। অনেক পরিশ্রম করে স্কুলের অনেক উন্নয়ন করেছি। এখন একটি মহল কেনো জানি আমার বিরুদ্ধে অহেতুক কুৎসা রটিয়ে আমাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করতে চায়, তার কারণটা বুঝতে পারছি না। স্কুলের প্রতি বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা নেই কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুলে অভ্যন্তরীণ কমিটি থাকলে তাদেরকে খরচের বিল-ভাউচার দিলেও তারা হিসাব করতে হবে না বলে জানিয়ে দেয়। তারপরও সব আয়-ব্যয় স্কুলের ভলিয়মে আছে বলে তিনি জানান।
জেলা শিক্ষা অফিসার গিয়াসউদ্দীন পাটোয়ারী গতকাল মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, অভিযোগের শিকার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুদকের নির্দেশে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত তথ্য দিয়ে জানায়, ফরিদগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ডঃ মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যখন ওই বিদ্যালয় পরিচালনার জন্যে বোর্ডের অনুমোদিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন, তখন অর্থাৎ ২০১৩ সালে রফিকুল আমিন কাজল প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন। তবে ইতিপূর্বে নির্বাচনে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক পদে ৪ জন নির্বাচিত হলেও তারা দায়িত্ব না পাওয়ায় নির্বাচিত এক অভিভাবক মোস্তফা কামাল মুকুল স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা দিয়েছিলেন। এ মামলা নিষ্পত্তি কিংবা প্রত্যাহার বা খারিজ না হলেও সেই সময়ে থাকা এডহক কমিটির মাধ্যমে রফিকুল আমিন কাজলকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।