চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে চাঁদপুরের সর্বজনীন মিলন মেলা �মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা�র নিরাপত্তা নিয়ে চাঁদপুরবাসী শঙ্কিত ছিলো। নির্বিঘে� এবার বিজয় মেলা করা যাবে কিনা তা নিয়ে আয়োজকরাও সংশয়ে ছিলো। কিন্তু না, এবারের বিজয় মেলা নি�িদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হচ্ছে। যা চাঁদপুরের বিজয় মেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। এবারের বিজয় মেলায় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজিত হয়েছে। তা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। পুরো বিজয় মেলা মাঠ এবং আশপাশের রাস্তা এই সিসি ক্যামেরায় বন্দী হয়ে আছে। কোনো দুষ্কৃতকারীরা লুকিয়ে কিছু করার কোনো সুযোগ নেই। তাই চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মাঝেও এবারের বিজয় মেলার নিরাপত্তা প্রশ্নাতীত।
গত ২৫ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সরকার বিরোধী কর্মসূচি শুরু হয়। লাগাতার হরতাল-অবরোধকে ঘিরে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ককটেল বা বোমাবাজি, হত্যাসহ আরো নানা সহিংস ঘটনা সারাদেশের মতো চাঁদপুর জেলায়ও চলমান রয়েছে। ২৫ অক্টোবর থেকে গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪০ দিনে চাঁদপুর জেলায়ই রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছে ছয় জন। যা স্বাধীনতা পরবর্তী চাঁদপুরে কখনো ঘটেনি। এতেই বুঝা যাচ্ছে, নিরাপত্তার দিক দিয়ে চাঁদপুর কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এতো মারাত্মক ঝুঁকির মাঝেও চাঁদপুরের বিজয় মেলা উদযাপনব কমিটি সকলের সহযোগিতায় ১ ডিসেম্বর থেকে মাসব্যাপী বিজয় মেলা শুরু করেছে। শুরুর দু�দিন পরই ৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর শহরে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধের সমর্থনে মিছিলে পুলিশের গুলিতে ২ জন প্রাণ হারায়। এতে পুরো জেলাবাসী আতঙ্কিত ও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় দু�দিন বিজয় মেলার কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এরপর আবার ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়। ৬ ডিসেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন চাঁদপুর মহকুমা বিএলএফ প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ আবদুল মমিন খান মাখন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ডাঃ দীপু মনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বেশ স্বতস্ফূর্তভাবে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ব্যাপক দর্শক সমাগম ঘটে।
গতকাল শনিবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিজয় মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলার মাঠ ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াহিয়া কিরণ এই প্রতিবেদককে এবারের বিজয় মেলার নিরাপত্তায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি দেখালেন। মেলা মঞ্চের পেছনে এই সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। এটি অপারেট করেন ইয়াহিয়া কিরণ নিজেই। টিভির পর্দায় দেখা গেলো পুরো মেলা মাঠ সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে। মেলার প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে মেলার ভেতরের প্রত্যেকটি গলি এবং প্রতিটি স্টলের অবস্থান পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে এই সিসি ক্যামেরায়। এমনকি মেলার সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, মেলার পশ্চিম পাশে মহিলা কলেজ রোড, মেলার পেছনে হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গলি ও মেলার পূর্ব পাশসহ মেলা মাঠের বাইরের চারপাশের চিত্র এই সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে। একই সাথে সবকিছু রেকর্ডিং হচ্ছে। কন্ট্রোল রুমে বসে অপারেটর টিভির পর্দায় কোথাও কোনো জটিলতা বা সমস্যা দেখলে তিনি ওয়াকিটকির মাধ্যমে সাথে সাথে অন্য কর্মকর্তাদের অবহিত করলে তারা দ্রুততার সাথে সে বিষয়টি দেখেন। তাছাড়া মেলার প্রবেশ দ্বারেই রয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। সার্বিক দিক অবলোকন করে বলা যায় এবারের চাঁদপুরের বিজয় মেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। মেলায় আগত ক�জনের সাথে কথা বললে তারা মেলার সার্বিক নিরাপত্তা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।