স্টাফ রিপোর্টার=
বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের টানা তিনদিনব্যাপী হরতালের ২য় দিন গতকাল সোমবার শহরের পুরাণবাজার নতুন রাস্তায় পুলিশ বিএনপির সংঘর্ষে প্রাণ হারালো পুরাণবাজার পাওনিয়ার সূতা ফ্যাক্টরীর শ্রমিক আরজু ঢালী (১৪)। নিহত আরজুর পিতা রিক্সা চালক মকবুল ঢালীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমার ২ ছেলে। তন্মধ্যে বড় ছেলে নয়ন ঢাকায় ট্রাক চালায়। ছোট ছেলে আরজু গত আড়াই বছর যাবৎ সুতা ফ্যাক্টরীতে কাজ করছে। পুরাণবাজার মাছ বাজার এলাকায় লতিফ খানের সুতা ফ্যাক্টরীতে কাজ করার পর গত ১০/১২ দিন পূর্বে কয়লাঘাট পাওনিয়ার সুতা ফ্যাক্টরীতে আরো বেশী বেতন চাকুরী নেয়। আরজু ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো সে ফ্যাক্টরীতে যাওয়ার আগে পুরাণবাজার জনতা লবন মিল ঘাট দিয়ে নদীতে গোসল করতে যাওয়ার পথে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে চলা সংঘর্ষের জাতাঁকলে পরে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টাকালে লোহার পিলারের সাথে প্রচন্ড বেগে মাথায় আঘাত পায় এবং সাথে সাথে নিচে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় তার উপর দিয়ে মানুষজন ছোটাছুটি করে এবং ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। অথচ শহরে গুজব ছড়িয়ে পরে আরজু বিএনপির কর্মী। কিন্তু নিহত আরজুর বাবা-মা এসব গুজবে কান না দিতে বলেন। তাদের দাবি আরজু কখনোই কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল না। কেউ বলতে পারবেনা আমার ছেলে কোথাও কোন মিটিং মিছিলে অংশ নিয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী জানায়, নিহত আরজু রাজনীতি থেকে দূরে থাকে। সে এলাকার কারো সাথে কোন ঝগড়া পর্যন্ত করতে দেখা যায় না। নিহত আরজুর বাবা আরো জানান, আমার এ কিশোর সন্তানের বিচার আল্লাহর কাছে চাইবো। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার এ ছেলে কাজ ছাড়া কোন কিছুই বুঝেনা। আর আমার ছেলের নিহত হওয়ার পর কেউ কেউ বলে সে বিএনপি করে। কেউ বলে যুবদল, কেউ বলে ছাত্রদল। আমার মৃত সন্তানকে নিয়ে এভাবে রাজনীতি করাটা আমার কাছে খুবই দুঃখজনক। নিহত আরজুর মা রহিমা বেগম জানান, ফ্যাক্টরীতে আরজুর ডিউটি দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। সে ফ্যাক্টরীতে যাওয়ার আগে ভাত খাবে। তাই সে গোসল করতে যায়। আর আমি তার জন্য ডিম ভাজি করেছি। গোসল করে ডিম দিয়ে ভাত খেয়ে কাজে যাবে। কিন্তু আমার বাবার ডিম ভাজি হইলো, কিন্তু গোসল করা হইলো না। মা এভাবেই বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে আর বলছে। নিরীহ কিশোর আরজুর মৃত্যু নিয়ে চলছে রাজনীতি। তার বাবা-মা বলছে, সে কোন দলের সাথে জড়িত নেই। আর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো বলছে তাদের কর্মী। অথচ এ কিশোরটি অভাবের সংসারে রিক্সা চালক বাবাকে সহযোগিতা করতে একটু বুঝ হয়েই শ্রমিকের কাজে যোগ দেয়।
এদিকে গতকাল পুরাণবাজার নতুন রাস্তার ট্রাকঘাটে নিহত আরজুর জানাজার পূর্বে জেলা বিএনপির শীর্ষ ও নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতা তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, কিশোর আরজু ঘটনার পূর্বে তার সাথে (নতুন বাজারে) বাসায় কথা বলে এসেছে। বিষয়টি শুনার পর উপস্থিত মুসল্লি এবং পরিবারের লোকজন হতবাক হয়ে যান।
এমনকি বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী একে অপরের দিকে চাওয়া শুরু করে। এ ব্যাপারে তার বাবা-মা এবং আশে পাশের মানুষজন বলেন, আরজু ঘুম থেকে ওঠে বাথরুম সেরে গামছা এবং পকেটে সাবান নিয়ে গোসলের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পথিমধ্যেই দু’ রাজনৈতিক দল এবং পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায় না ফেরার দেশে।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।