► নিষেধাজ্ঞার জবাবে পুতিনের ঘোষণা
► অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা
► ইউক্রেনের খারকিভে তুমুল লড়াই
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশের ‘পারমাণবিক সুরক্ষামূলক’ অস্ত্রসম্ভারের ওপর ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করেছেন। এটি রাশিয়ার ‘কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রসম্ভারের’ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা। ‘ন্যাটোর আগ্রাসনের জবাবে’ এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে পুতিন জানান। রাশিয়ার এ ঘোষণার অর্থ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবেই তা নয়।
তার পরও যুক্তরাষ্ট্র ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে। ন্যাটোর প্রধান এটিকে ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইউক্রেনে রুশ হামলার চতুর্থ দিনে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে প্রচণ্ড সংঘাতের মধ্যে রাশিয়ার লৌহমানব হিসেবে পরিচিত পুতিনের এ নির্দেশনা এলো।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শুইগুসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় গতকাল রবিবার পুতিন পরমাণু অস্ত্রসম্ভারের প্রস্তুতির কথা বলেন। এ সময় রুশ নেতা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি ‘অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ’ নিয়েছে এবং ‘অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে হামলার শাস্তি হিসেবে দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আর্থিক নিষেধজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। এর কিছুটা কার্যকর করা শুরুও হয়ে গেছে।
এদিকে গতকাল রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী বেলারুশের মিনস্কে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হননি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদেমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যে মাটি থেকে রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা ছুড়ছে, সেখানে গিয়ে আলোচনা হতে পারে না। এ ঘোষণার পর ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জানান, ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করবে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল।
এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেংকোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে, প্রিপিয়াত নদীর কাছে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করবে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল। ’
প্রতিবেশী বেলারুশে যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জেলেনস্কি বিকল্প ওয়ারশ, ব্রাতিস্লাভা, ইস্তাম্বুল, বুদাপেস্ট বা বাকুর কথা বলেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, মিনস্ককে আলোচনার জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে রাশিয়া, বেলারুশও নয়, ইউক্রেনও নয়। এ ছাড়া ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে—রাশিয়ার এমন শর্ত মানতেও রাজি নয় বলে জানায় ইউক্রেন। দেশটি বলে, তারা কোনো চূড়ান্ত বা অগ্রহণযোগ্য শর্তাবলিতে রাজি নয়।
ইউক্রেনে চলমান রুশ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই শরও বেশি সাধারণ মানুষ। শরণার্থী হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি লোক।
দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে যুদ্ধ
গতকাল ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে প্রবেশ করে রাশিয়ার সেনা। রুশ আক্রমণ প্রতিহত করার দাবি করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। সেখানকার গভর্নর জানান, ইউক্রেনীয় সেনারা খারকিভ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। শহরের হাজার হাজার মানুষ বেইসমেন্ট ও আশ্রয়কেন্দ্রে শনিবার রাত কাটিয়েছে।
টিকে আছে কিয়েভ
ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, রুশ সেনারা রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন দিকে অবস্থান নিয়েছে। তবে শহরে ঢুকে পড়েছে তাদের ‘অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানো দল’। ওই দলের সঙ্গে লড়াই চলছে ইউক্রেনীয় সেনাদের।
ঘেরাও দুই শহর
মস্কো জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ‘পুরোপুরিভাবে’ উত্তর ইউক্রেনীয় শহর খেরসন ও আজভ সাগরের উত্তর-পূর্বের বার্দেয়ানস্ক ঘেরাও করে রেখেছে।
তেল ও গ্যাস স্থাপনায় আক্রমণ
ইউক্রেনীয় তেল ও গ্যাস স্থাপনায় গতকাল আক্রমণ করেছে রাশিয়ার বাহিনী। বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে এ ঘটনায়। কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেনের পর শোনা গেছে বিস্ফোরণের শব্দ।
১৯৮ বেসামরিক লোকের মৃত্যু
ইউক্রেনীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান জানিয়েছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনে তিন শিশুসহ অন্তত ১৯৮ জন ইউক্রেনীয় মারা গেছে। জাতিসংঘের এক ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, মারা যাওয়া ২৪০ জনের মধ্যে ৬৪ জন সাধারণ নাগরিক।
রাশিয়ার ৩৪০০ সেনা নিহত
আগ্রাসনের চতুর্থ দিন পর্যন্ত রাশিয়ার মোট তিন হাজার ৪০০ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। হতাহতের কথা স্বীকার রাশিয়ার : প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনে হতাহতের কথা স্বীকার করেছে, তবে সংখ্যা কত তা বলেনি।
ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞা : ইইউ ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাবে এবং ইউরোপীয় আকাশসীমা থেকে সব রাশিয়ান ফ্লাইট নিষিদ্ধ করবে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি