প্রতিনিধি
মতলব পৌর এলাকাসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। এ কারণে ব্যবসা, বাণিজ্য ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী, শিশুসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা। বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহকরা কথা বললে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা রূঢ় আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মতলব শহরের কলাদী, ঘোষপাড়া, নবকলস, ঢাকিরগাঁও, ভাঙ্গারপাড়, দূরগাঁওসহ আশেপাশের গ্রাহকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিগত প্রায় এক মাস যাবৎ সকাল থেকে শুরু করে একটু পর পর বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। দিনে প্রায় ৩০ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে। এর ফলে গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ দেয়া ও নেয়ার কারণে ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীগণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে পল্লী বিদ্যুতের জরুরি মুঠোফোনে আলাপ করলে অপর প্রান্তে কর্মকর্তারা গ্রাহকদের সাথে রূঢ় আচরণ করেন বলে একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছে। লোডশেডিংয়ের এ নাজুক পরিস্থিতিতে প্রশাসন নির্বিকার দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ৩/৪দিন যাবৎ দিনে প্রায় ৩০ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন কাজের কারণে ঘন ঘন বিদ্যুৎ নেয়া ও দেয়া হচ্ছে। তাদের এ বিভিন্ন কারণ কী এ নিয়ে শহরবাসীর মনে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের একাধিক গ্রাহক জানান, মতলবে বিদ্যুতের লোডশেডিং এক স্থায়ী যন্ত্রণার নাম। এই যন্ত্রণা ও অত্যাচারে সবচাইতে বেশি কাহিল মতলব দক্ষিণ উপজেলার মানুষগুলো। মতলবে পল্লী বিদ্যুতের অসহনীয় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের এই লোডশেডিংয়ের ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ এই থাকে, এই নাই। দীর্ঘক্ষণ পরে যেই আসে, মুহূর্তের মধ্যেই চলে যায়। আর নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। সারা দিন-রাত অসহনীয় বিদ্যুতের লোডশেডিং ও লুকোচুরি চলছে অন্তহীন। এই যাওয়া আসার খেলা চলছে মতলব শহরসহ পুরো মতলব দক্ষিণ উপজেলায়।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার গ্রামাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৬ ঘণ্টাই বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়ীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধস নেমেছে। বেশ ক’জন গ্রাহক জানান, পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে এবং বিদ্যুৎ নির্ভর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লেখাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের।
মতলব পল্লী বিদ্যুৎ অফিস (০১৭৬৯-৪০০৯২২) নম্বরে এ প্রতিনিধি আলাপ করলে হারুন পরিচয়ে এক ব্যক্তি জানান, বিদ্যুৎ আসতে দেরি হবে। কখন আসে জানি না। ‘লাইনে সমস্যা-বুঝেন না, পাইবেন দেরি হবে’ বলে কথা শেষ না করেই লাইনটি কেটে দেয়। পরে একাধিকবার তাকে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগের বসবাস গ্রামে হলেও তারা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পায় যৎসামান্যই। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদাগুলো তারা কতটুকু ভোগ করতে পারছে তা ভেবে দেখা দরকার। দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠী গ্রামে বাস করলেও তারা যার যার অবস্থান থেকে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। গ্রামের এই জনপদের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারাও পিছিয়ে নেই। কেউ স’মিল, কেউ মটর গ্যারেজ, কেউ লেদ মেশিনের ওয়ার্কশপ, কেউ গ্রীলের ওয়ার্কশপসহ নানান ছোটখাট শিল্প কারখানা গড়ে তুলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সবখানে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বর্তমানে কি শহর, কি গ্রাম সবখানে কল-কারখানা গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎ নির্ভর। তাই দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় এরা সময় মত গ্রাহকদের মালামাল সরবরাহ করতে না পারায় তাদের আয়-রোজগার কমে যাওয়াতে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে। লোডশেডিং দীর্ঘস্থায়ী হওয়াতে গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানগুলোতেও বেচা-বিক্রি কমে গেছে।
পল্লী বিদ্যুতের এজিএম ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম মোঃ মনির হোসেন জানান, গত ১৫ ও ১৬ মে বিদ্যুতের কিছু সমস্যা থাকলেও ১৭ মে লোডশেডিং কম দেয়া হয়েছে। গতকাল ১৮ মে লোডশেডিং একটু বেশি দেয়া হয়েছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ নিয়ে সংযোগ দিয়ে চেক করা হচ্ছে।