মনির হোসেন খান।
ছোট মাঝারি ও বড় সকল ব্যবসায়ীদেরই পন্যের মালিকানা হস্তান্তরে প্রয়োজন পড়ে পাঁচ টাকার কয়েন এবং নোটের। কোন ক্রেতা যদি একটি দোকান থেকে পয়তাল্লিশ টাকা মুল্যের কোন পন্য কিনে বিক্রেতাকে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট দেন, তবে তার বিপরীতে দোকানি ক্রেতাকে তার প্রাপ্য পাঁচ টাকা ফিরিয়ে দিবেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দোকানি ক্রেতাকে তার প্রাপ্য পাঁচ টাকা ফিরিয়ে দিতে পারছেন না। কারন দোকানির ক্যাশ বাক্সে সেই পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট থাকছে না। ফলে দোকানি বাধ্য হয়ে ক্রেতাকে বলছেন, ভাই আমার কাছে তো পাঁচ টাকার কোন কয়েন বা নোট নেই,তাই আপনি যদি আমার কাছ থেকে পাঁচ টাকার একটি চকলেট বা ওয়েফার নেন তবে আর কোন সমস্যা থাকে না। কোন কোন ক্রেতা দোকানির সে অনুরোধ রাখেন। কিন্তু অনেক ক্রেতাই আছেন যারা তার প্রাপ্য পাঁচ টাকাই চান,অন্য কোন অপশনে তারা যেতে চান না। বাদানুবাদটার শুরু তখনই। আর এমন বাদানুবাদ চাঁদপুর শহরের অনেক ক্রেতা বিক্রেতার মাঝেই পরিলক্ষিত হয়। সে হউক ছোট কোন ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, বা কোন মুদি দোকানি,কিংবা ঔষধ ফার্মেসী, অথবা স্ট্রিট হকারদের দোকান, অথবা কাঁচা পাঁকা মাল ব্যবসায়ী। প্রায় সবখানেই এ দৃশ্য চোঁখে পড়ে। কলার দোকানে তিন হালি কলার মুল্য যদি হয় পঁচাশি টাকা, ক্রেতা নব্বই টাকা দিলেও ঐ পাঁচ টাকা আর বিক্রেতা ফিরিয়ে দিতে পারেন না। ফলে দোকানি ক্রেতাকে অনুরোধ করে বলেন, ভাই পাঁচ টাকাতো আমার কাছে ভাংতি নেই,তাই আপনি আরেকটি কলা নিয়ে যান। তদরুপ কাঁচা তরকারির ক্ষেত্রেও সেই একই কথা,পাঁচ টাকার ধনেপাতা, বা মঁরিচ বাড়িয়ে দিলাম নিয়ে যান। খুচঁরো পাঁচ টাকা নেই। অনেক দোকানী আবার বলেন ভাই পাঁচ টাকা পাওনা রইলেন, পরের বার পাঁচ টাকা কম দিয়ে যাবেন। পাঁচ টাকার কয়েন বা নোটের সঙ্কটে পরিবহন ব্যবসায়ীদের মাঝেও প্রভাব পড়েছে। তবে এর তীব্রতা বেশি দেখা যায় অটোরিক্সা চালক ও যাত্রীদের ভেতর। অটোরিক্সার অধিকাংশ যাত্রীই পাঁচ টাকার দূরত্বে যাতায়াত করেন। এই অটোরিক্সাতে পাঁচ টাকার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। অথচ পাঁচ টাকার কয়েন সঙ্কটের কারনে প্রায়শঃই চালক ও যাত্রীদের মাঝে বচসার সুত্রপাত হয়। কারন যাত্রী যখন পাঁচ টাকার দূরত্বে গিয়ে দশ টাকার নোটটি দেন,তখন অনেক সময় চালক পাঁচ টাকা ফিরিয়ে দিতে পারছেন না। তখনই শুরু হয় বচসা। অটো চালকরাতো আর পন্য বিক্রি করেন না যে, বলবেন ভাই পাঁচ টাকার পন্য নিয়ে যান। শহরের অনেক অটোচালকদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। শহরের নানান বাজারের ছোট বড় দোকানি, ফার্মাসিষ্ট, অটোচালক, স্ট্রিট হকারদের সাথে কথা বলে এহেন পাঁচ টাকার কয়েন ও নোটের সঙ্কটের কথা জানা গেলো । তাদের সাথে সরেজমিনে আলাপ কালে তারা বলেন এই পাঁচ টাকার কয়েন ও নোটের সঙ্কটের জন্য তাদের ব্যবসা করতে অনেক বেগ পোহাতে হচ্ছে। স্হানীয় ব্যাংক গুলোতে ধর্না দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা এই পাঁচ টাকার কয়েন ও নোট। তাদের ভাষায় পাঁচ টাকার কয়েন ও নোট এখন সোনার হরিন। এমন চিত্র উপজেলার অন্যন্ন বাজার গুলোতে, এমনকি দেশের অনেক জেলার বাজার গুলোতেও দৃশ্যমান। অথচ বছর আঁটেক আগেও দু টাকা পাঁচ টাকার কয়েনে বাজার ছিলো সয়লাব। সারা দেশের বাজারে তখন এতো বেশি কয়েনের আধিক্য ছিলো যে, অনেক ছোট বড় ব্যবসায়ীদের কাছে লক্ষ টাকার কয়েনও অলস পড়েছিলো বস্তা বন্দী হয়ে। কোন অবস্হাতেই তারা সেসব কয়েন কমাতে না পারার কারনে কেউ কেউ এক লক্ষ টাকার কয়েন আঁশি হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে শোনা গেছে। এর ভেতর পাঁচ টাকার কয়েনের আধিক্যই ছিলো বেশি। তখন এই পাঁচ টাকার কয়েন নিয়ে গন মাধ্যমে খবর বেরুবার পর তৎকালিন অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল মুহিতও এই কয়েন নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। অথচ আজ তার উল্টো রুপ। ক্ষুদ্র,মাঝারি,বড় সব দোকানিদের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থ মন্ত্রী একটু সদয় হলে তারা এ পাঁচ টাকার কয়েন ও নোটের বর্তমান সঙ্কট হতে মুক্তি পেয়ে সাবলিল ভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি নতুন করে কিছু পাঁচ টাকার কয়েন ও নোট বাজারে ছাড়েন তবে তারা বেশ উপকৃত হতেন। তাদের এমন দাবী নেহাত অমূলক নয়, কারন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় বাংলাদেশে প্রচলিত সব মুল্যমানের নতুন নোট বাজারে ছাড়েন। ঈদের দিনে অনেকেই তার আত্নীয় স্বজন বা প্রিয়জন কে ঈদের বকশিস হিসেবে নতুন নোট দিয়ে থাকেন। এটা এখন বাংলাদেশের একটা রীতিতে পরিনত হয়েছে। তাই ঈদের প্রাক্কালে ব্যাংকের অধিকাংশ গ্রাহকই ব্যাংক থেকে কড়কড়ে নতুন নোট তুলে আনেন প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য। তাই কয়েন সঙ্কটে থাকা ব্যবসায়ীদের দাবী এই নতুন নোট বাজারে ছাড়ার সাথে সাথে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের সুবিধার্তে কিছু নতুন পাঁচ টাকার কয়েন ও নোট বাজারে ছাড়েন,তবে তারা বেশ উপকৃত হতেন। এ বিষয়ে তারা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছেন।