বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হওয়া নামী ব্র্যান্ড ও সুপরিচিত নয়, এমন ১৯টি পাউরুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয় বিভিন্ন গবেষণাগারে। সেসব পাউরুটি পরীক্ষা করে ১৬টির ক্ষেত্রে বা ৮৪ শতাংশে পটাশিয়াম ব্রোমেটের এই উপস্থিতি পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। গত ৮ জুন পাউরুটির নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়। এই পটাশিয়াম ব্রোমেট শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসার, কিডনি, মস্তিষ্ক, জিনগত রোগ, থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ তৈরির সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
পাউরুটিগুলোতে পাওয়া পটাশিয়াম ব্রোমেটের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩১ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) থেকে ১২ দশমিক ৯১ পিপিএম। অর্থাৎ ব্যবহৃত আটার ১০ লাখ ভাগের ৩ দশমিক ৩১ থেকে ১২ দশমিক ৯১ ভাগ পটাশিয়াম ব্রোমেট। এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ। তিনি বলেন, পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে ঢাকায় যে ফলাফল পেয়েছি, এতেই বিশ্বাস, বাংলাদেশে উপাদানগুলো বিস্তৃতি পরিসরে ব্যবহৃত হয়।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টন পাউরুটি উৎপাদিত হয় বলে বাংলাদেশ অটো-বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য। এসব পাউরুটির মেয়াদ থাকে তিন দিন পর্যন্ত। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পাউরুটি ফুলাতে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট ব্যবহৃত হয়। এগুলো ছাড়াও আরও কিছু ‘ইমপ্রুভার’ ব্যবহৃত হয়, যা দিয়ে পাউরুটির স্বাদ ও আকার ঠিক করা হয়। এই পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেটের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশে এর ব্যবহার বেশি। পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে রুটি, পাউরুটি ও বেকারি পণ্যে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
পাউরুটি তৈরির জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) একটি মান নির্ধারণ করে দেয় ২০১৬ সালে। তখন পাউরুটি ইমপ্রুভার হিসেবে অ্যামোনিয়াম পারসালফেট, পটাশিয়াম ব্রোমেট, পটাশিয়াম আয়োডেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, অ্যাসিড ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম ফসফেট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। এক কেজি পাউরুটিতে পাঁচ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহারের অনুমতি ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে পাউরুটিতে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও আয়োডেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বিএসটিআই।
নিষিদ্ধ করার পরও কেন ব্যবহৃত হচ্ছে এই উপাদানগুলো? বাংলাদেশ অটো-বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া এ নিয়ে বলেন, ‘আমরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সদস্যের আওতায় আনতে পারি না। পাউরুটি ফুলানোর জন্য এখন নীতিনির্ধারণী ও তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিকারের উপায়ের কথা বলুক। আর আমাদের সদস্যরা বিএসটিআইয়ের নির্দেশনার কথা সেভাবে জানেও না।’
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, সামনে গ্রামাঞ্চলে পাউরুটির নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এরপর পটাশিয়াম ব্রোমেটের উৎস খুঁজে বের করা হবে, যাতে পাউরুটি উৎপাদনকারীরা ব্যবহার করতে না পারে। তবে আমদানি বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এগুলোর ব্যবহার অন্য শিল্পেও থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমবার ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ায় উৎপাদনকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এরপর কারও পাউরুটিতে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’