মনিরুল ইসলাম মনির:
চাঁদপুরের মেঘনা বক্ষে বাংলাদেশ ইঞ্জিন এন্ড বাল্কহেড বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে ইঞ্জিনবাহী ট্রলারযোগে সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজিকালে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় চাঁদাবাজ চক্রকে প্রতিহত করা হয়েছে। চাঁদাবাজ চক্রটি ওই অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার সাঁটিয়ে মেঘনা বক্ষে মালামাল বহনকারী বাল্কহেড বোটে চাঁদাবাজি করে আসছে। প্রতিদিন এ চক্রটি মেঘনা বক্ষে চলাচলকারী মালবাহী ইঞ্জিনচালিত বোট থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চাঁদাবাজিকালে চক্রটি প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিআইডবিস্নউটিএ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামও ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে।
২৪ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রামদাসদী এলাকার সীমানায় এবং বহরিয়া বাজার সীমানার মেঘনা বক্ষে দু’দিক থেকে মালামাল বহনকারী ৩/৪টি ইঞ্জিন চালিত বাল্কহেড বোটকে লাল পাতাকা উড়িয়ে এদের গতিপথ লৰ্য করে ছুটে আসে। প্রতিটি মালবোঝাই বাল্কহেড বোট থামিয়ে নানা অজুহাত এবং সরকারের রাজস্ব ইত্যাদি কাগজপত্রাদি প্রদর্শন করে ওই অ্যাসোসিয়েশনের নামে চাঁদা আদায়ের পর ছেড়ে দেয়া হয়। এমনিভাবে গতকাল ৩টি বোটে চাঁদাবাজির পর বিষয়টি সাংবাদিকরা রামদাসদী আশ্রায়ন প্রকল্প কাজে থাকা সেনা সদস্যদের দেখায়। পরে উপস্থিত দু’জন সাংবাদিকের অনুরোধে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ইশারায় তারা তীরে ভিড়ে।
বিষয়টি ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খানকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিক রামদাসদীর আশ্রায়ন প্রকল্পের তীরে চলে আসেন। পরে বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোর্শেদ, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার লেঃ জহুরুল হককে মোবাইলে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চক্রটি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে ঃ বাংলাদেশ ইঞ্জিন এন্ড বাল্কহেড বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়কে বিষয়টি মোবাইলে জানানোর পর প্রধান কার্যালয় থেকে বলা হয় এদের ধরে আইন প্রয়োগকারীর কাছে তুলে দিতে।
অবৈধ পন্থায় চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পরিচয়দানকারী মামুনুর রশিদ। যিনি ঢাকা থেকে এসে স্থানীয় বেশ ক’জনকে ম্যানেজ করে চাঁদাবাজিতে নামে। চাঁদপুর পুরাণবাজার হরিসভায় এদের আঞ্চলিক অফিস ও ঠিকানা ব্যবহার করলেও আদৌ সেখানে এদের অফিস আছে কি-না, তা কেউই বলতে পারে না। আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমিতির সহ-সভাপতি নাম ব্যবহারকারী বয়োবৃদ্ধ নুরু গাজী এবং চাঁদা আদায় বহনকারী ইঞ্জিন চালিত বোটে জাফরাবাদ এলাকার কালু হাওলাদার প্রতিদিন ২শ’ টাকা হাজিরায় এ কাজে ৩দিন যাবৎ চক্রটির সাথে রয়েছেন। তবে এ চক্রটিকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন স্থানীয় দু’জন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা সাংবাদিকদের জানান, মূলতঃ মেঘনা বক্ষে চাঁদাবাজি হচ্ছে, এমন অভিযোগ যাচাই করতেই তাদের আসা।
এ চক্রটি পুরাণবাজারের হারুণ শেখের মালিকানাধীন ইঞ্জিনচালিত বোটটি প্রতিদিন ৫শ’ টাকা ভাড়ায় এবং প্রতিদিন ১০ লিটার ডিজেল দেয়ার চুক্তিতেই এদের সাথে মেঘনা বক্ষে বের হচ্ছে। তবে বেশি চাঁদা আদায় হলে সেখান থেকে মাঝি হারুন শেখকে বকশিস এবং নাসত্দাও দিয়ে থাকেন। এভাবেই চাঁদাবাজ চক্রটি মেঘনা বক্ষে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছিলো। চাঁদাবাজ চক্রটি তীরে আসার পর স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের কাছে থাকা কাগজপত্র সঠিক হলে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহকারে নদী বক্ষে নামতে হবে। মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি আমি স্বাভাবিকভাবে নিলেও এখানকার জনগণ এবং নদী বক্ষে চলাচলকারী বাল্কহেড বোটের লোকজন তা মানবে না। এজন্যে বিষয়টি প্রথমবারের মতো মার্জনা করা হলো।