বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
আজ শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৭তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিবের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনার শৈশব কাটে পিত্রালয়ে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি মা-বাবার সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। শৈশব
থেকেই শেখ হাসিনা ছিলেন মা-বাবা ও দাদা-দাদির আদরের। আদর করে সবাই তাঁকে ডাকতেন ‘হাসু’ বলে। সেই হাসুই দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী থাকাবস্থায় ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নামে তাঁদের দুই সন্তান রয়েছেন। ২০০৯ সালের ৯ মে ওয়াজেদ মিয়া ইন্তেকাল করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কালরাতে বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। বিদেশে থাকতেই ৩৪ বছরেরও কম বয়সে তাঁকে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দলটির হাল ধরে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আজ আওয়ামী লীগকে দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে এবং তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে বর্তমানে সরকার পরিচালনা করছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সেরেস পদক, ইউনেসকোর পার্ল এস বাক পদক, মাদার তেরেসা পদক, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্মৃতি পদক, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালের রাষ্ট্রপ্রধান পদক, রোটারি ফাউন্ডেশনের পল হ্যারিস ফেলোশিপ, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার; গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সৃজনশীল লেখালেখির জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই মেয়ে।
সর্বশেষ এবারও দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ কর্তৃক সম্মানজনক ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। গত বছরও মহিলা ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
১৯৯৬-০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯৮৬, ‘৯১ ও ২০০১ সালের সংসদে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করলে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন।
দেশপ্রেম আর মানুষের প্রতি মমত্ববোধে উজ্জীবিত বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন ৩০ বছরের অধিককাল। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর জন্মদিন পালিত হবে অতি সাধারণভাবে। টানা চার বছরের মতো এবারও এ দিনে দেশের বাইরে রয়েছেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গেছেন তিনি। আগামী সোমবার বিকেলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। দেশে না থাকলেও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে আর দলের সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন উপলক্ষে আজ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল, বস্ত্র বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা, আনন্দ র্যালি, দোয়া, মিলাদসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।