দেলোয়ার হোসাইন,
* স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ফলকে স্বীকৃতি দিতে কেউই সম্মত নয়
* ফুটপাত ফল ব্যবসায়ীর সংখ্যা আশংকাজন হারে কমেছে।
* ফরমালিন প্রয়োগের হার কমানো সহ আমাদানী নিষিদ্ধের দাবি।
মাছ শাক-সবজি, মুড়ি, ফল-মূল, ইফতারের জন্য অন্যতম খাদ্য দ্রব্য খেজুর সহ বাজারে বিক্রি হয় এমন কোন খাদ্য দ্রব্য নেই যেসবের মধ্যে ফরমালিন নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ফরমালিন আর বিষের মাঝে মানবদেহে দ্রুত আর ধীগতিতে ক্রিয়াশীল ছাড়া কোন তফাৎ নেই। অথ্যাৎ সরাসরি বিষ যেমনিভাবে মানবদেহে দ্রুত ক্রিয়াশিল তেমনি ফরমালিন নামক বিষও মানবদেহে তড়িৎগতিতে না হয়ে একটু দেরিতে হলেও ক্রিয়াশিল। খাদ্যে ফরমালিন নামক বিষ প্রয়োগ হচ্ছে এর প্রচারনা সারাটি বছর যেমনিভাবে মিডিয়াজুড়ে ছিল, তেমনি বাস্তবতায় ফল সহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল বিভিন্ন ধরনের অভিযান। ফলের মধ্যে তুলনামূলক ফরমালিন বেশি প্রয়োগ হওয়ায় এসব অভিযানগুলোতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ফল বিনষ্ট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চাঁদপুরেও একাধিক পরিবার ফরমালিনযুক্ত ফল খেয়ে অসুস্থ্য হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফরমালিন বিরোধী অভিযানে ফরমালিনের ব্যবহার কিছুটা কমানো গেলেও বাজারের সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্য থেকে স্ব-মূলে ফরমালিন দুর করা সম্ভব হয় নি। কেননা ফরমালিনের অতিরিক্ত ব্যবহার ও আমাদানী উভয়টির একটিও এখনো বন্ধ হয়নি। আর ফরমালিন নামক বিষক্রিয়া ছড়ানোর পেছনে অতিরিক্ত প্রয়োগ ও অবাধে আমদানীকে মূল কারন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অপরদিকে খুচরা ফল বিক্রেতারা জানিয়েছেন ফরমালিন এক ধরনের বিষ, সাধারণ ক্রেতারা যেটুকো জানেন সেটুকোই তারা জানে, কিন্তু সত্যিকারের ফরমালিন নামক কোন প্রকার মেডিসিন স্ব-চোখে দেখার অভিজ্ঞতার কথা তারা অস্বীকার করেন, কিন্তু ফলের মধ্যে ফরমালিন মিশায় কারা, এমন জবাবে চাঁদপুরের একাধিক ফল ব্যবসায়ী জানান তাদের বিক্রিত অধিকাংশ ফল পাশবর্তী দেশ ভারত থেকে আসে, সেখান থেকে আমাদানীকারক ব্যবসায়ীরা ফলকে বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে ফরমালিন মিশিয়ে থাকেন, আবার বাগান মালিকরা তাদের চাষকৃত ফলের রং সুন্দর করার সুবাধে এক প্রকার ফরমালিন মিশিয়ে থাকেন। বর্তমানে দেশী-বিদেশী সকল ফলেই কম-বেশি ফরমালিন মেশানো হচ্ছে এমন কথা ব্যবসায়ীরা স্বীকার করলেও ুদ্র ব্যবসায়ী এর দায় নিতে রাজি নন। সব মিলিয়ে ফরমালিন মিশানো ফল আর ফলের গুনাগুন অবশিষ্ট না থেকে তা মানবদেহের জন্য বিষ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এখন ুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পেশাকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। কিন্তু চাঁদপুরের খুচরা ফল বিক্রেতারা তাদের পেশাকে ধরে রাখতে এবং জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঢাকার বাদামতলী কিংবা চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে আসা পাশবর্তী জেলা রামগঞ্জ লক্ষীপুরের আড়ৎ থেকে পাইকারী মূল্যে মৌসুমী বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয় করে আনে। কিন্তু প্রশাসনিক বিভিন্ন অভিযানগুলিতে দেখা যায় কোন আড়ৎ কিংবা বাগান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের ফলই সাধারণত বিনষ্ট করা হয় এতে করে খুচরা ফল বিক্রেতাদের ব্যবসায়ীক পুঁজি হারিয়ে যেমনি বিপাকে পড়তে হয় তেমনি আবার ফরমালিনে মূল হোতারা চলে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই খুচরা ফল বিক্রেতারা এখন বেশি ফল ক্রয় করা থেকে অনেকটাই বিরত থাকেন এবং ফরমালিন প্রচারনায় ক্রেতা সাধারণও বিষ মনে করে স্বাস্থ্যের উপকারী হিসেবে ফলকে বেছে নিতে রাজি নন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ফুটপাতের ফল বিক্রেতার সংখ্যা অনেকাংশে যেমনিভাবে কমেছে তেমনিভাবে যারা এখনও এ পেশাকে ধরে রেখেছেন তারাও অনেকে ক্রেতাশূন্য অবস্থায় দোকানে বসে ঝিমাচ্ছেন। ক্রেতা কম থাকায় মাঝে মাঝে দু’একজন ক্রেতা অতি প্রয়োজনে ফল ক্রয় করতে গেলে পাশাপাশি কয়েকটি দোকান থাকলে সকলে মিলে ক্রেতাকে ঢাকাঢাকি শুরু করে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসার মৌসুম সাধারণত দুটি এর একটি হলো জুন থেকে আগষ্ট আমের মৌসুম অপরটি রমজান মাস। এই দুই মৌসুমে ফলের দোকানে ক্রেতা সাধারণত বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর ফল ব্যবসায়ীদের দুটি মৌসুম আমের মৌসুম ও রমজান একত্রে হওয়ায় এবং ফরমালিন নামক বিষক্রিয়া খাদ্যে রয়েছে এমন প্রচরনায় ক্রেতা তুলনামূলক কম হয়েছে। এতে করে সকল খুচরা ফল বিক্রেতাদের বছরজুড়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জোর দাবি হচ্ছে, ফরমালিন আমদানীকারক ও ফরমালিন মিশ্রণকারী ফলের বাগানমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ফল একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এ বিশ্বাস সকলের মনে পুনরায় সৃষ্টি করা। না হলে হাজারো ফল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বেকারত্ব বরন করতে হবে এবং খাদ্য তালিকা থেকে ফল নামক স্বাস্থকর বিষয়টির নাম বাদ পড়ার আশংকা রয়েছে।