নিজস্ব প্রতিবেদক——–
রাজনীতিক বিবেচনায় চাঁদপুরের ফরিগনঞ্জ উপজেলার ঐতিয্যবাহী এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুতর অভিযোগ উঠেছ্ ে। এর বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ হিসেবে ওই স্কুলের দুই মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষক মাসুম আলম তালুকদার ও নূরে আলম টুটুল গত এক সপ্তাহ থেকে তাদের কাস বর্জন করে এখন আর ওই স্কুলে যাচ্ছেনা না। বিষয়টি যেন ফাঁস না করা হয় সে জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাসে কাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করে দিয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। তবে এ বিষয়টি সাংবাদিকরা জানার পর তা ধামা চাপা দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের অসাধু কয়জন উঠেপড়ে লেগেছ্ ে।
এ ছাড়াও এই স্কুলের অপর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ বাড়ির প্রতিপক্ষের সাথে জায়গা সংক্রান্ত মামলার আসামী হিসেবে জেল খাটায় স্কুলের মান ক্ষুন্ন হয়েছে এমন অভিযোগে হাছান গাজীকে সাময়িক ভাবে বরাখাস্ত করা হয়েছে।
এ নিয়ে স্কুলের সহ¯্রাধিক শিক্ষাথী ও অভিভাবকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছ্ ে। স্কুল কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার দাপটে হয়রানী হওয়ার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। একটি সুত্র অবশ্য জানিয়েছে, মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে দক্ষ শিক্ষক মাসুমকে স্কুলের স্বার্থে স্থায়ী ভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে আওয়ামীলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী ফরিদগঞ্জের এমপি ডঃ শামছুল হক ভুইয়া ও উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিনকে অনুরোধ করেও তার অনুরোধের কোন মূল্যায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ ।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে উক্ত স্কুলেরই ২০১০ইং সালে অভিভাবকদের দেয়া বিপুল ভোটে নির্বাচিত এক অভিভাবক প্রতিনিধি বলেন, যে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন না দেয়ায় এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ সেই মামলার নিষ্পত্তি, কিংবা কোন রায় হলো না এমন তথ্য গোপন রেখে ক্ষমতার দাপটে রাজনীতিক বিবেচনায় উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা যখন প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় , তখন এই স্কুলটির শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে কি করা হবে তা আর কারো বুঝার বাকী থাকে না।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জের ঐতিয্যবাহী এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালযের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ বছর থেকেই মেধা যাচাইয়ের বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতার দাপটে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে করে স্কুলটির বাহিরে ফিটফাট থাকলেও ভেতরে সদর ঘাটেরমত অবস্থা হয়ে স্কুলটি দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে চরম ভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কয়টি শিক্ষার্থীরা এস এস সি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ করে ব্যাপক সাফল্যে পেলেও এই শক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার দাপট্ র্আ একক আধিপত্য বিস্তার সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুরবস্থার কারনে কোন বছরই ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এস এস সি পরীক্ষায় শতভাগ পাশের সাফল্যে দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা গেছে, উক্ত স্কুলের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও গনিত ও শরীর চর্চা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক সহ মোট ৩ শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ২৬ মে বিঙ্গপ্তি প্রকাশের পর গনিত বিষয়ে শিক্ষক পদে মাসুম আবেদন করেন। গত ১৯ রমজান প্রথমে মৌখিক পরীক্ষা হয়। একই দিন লিখিত পরীক্ষা হয়।কিন্তু চলতি মাসের গত ১২ আগষ্ট গোপন সমজোতা ও রাজনীতিক দলীয় বিবেচনায় সরকার দলীয় এক নেতার স্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে দক্ষ শিক্ষক মাসুমকে বাদ দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের পাতানো পরীক্ষার মাধ্যমে ওই ৩ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ দুই অভিভাবক খলিল বলেন, দুই শিক্ষকের কাস বর্জনের কথা শুনে হতবাক হয়েছি। অপর অভিভাবক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, শিক্ষার স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফরিদগঞ্জের এমপি মহোদয়কে অনুরোধ করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের ফলে মান সম্মত শিক্ষা থেকে সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হওয়ার দায়দায়িত্ব কে নেবে?
প্রায় ৮ বছর যাবৎ অস্থায়ী ভিত্তিতে দুই মেধাবী শিক্ষক মাসুম ও টুটুল শিক্ষকতা পেশায় থেকে শিক্ষাথী ও অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু এই দুই শিক্ষককে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ দিতে কোন প্রক্রিয়া নেয়া হয়নি। মাসুম আবেদন করে লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষার অনুমতি পেলেও রহস্যেজনক কারনে তাকে ইন্টারভিউ কাডর্ও প্রেরন করেনি। চাকুরী দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের মৌখিক আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মাসুম উক্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছে। তবে টুটুলের চাকুরী হবে না নিশ্চিত জেনে সে আবেদন না করেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
শিক্ষক মাসুম বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবৎ এই স্কুলে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষকতা করছি। স্থায়ীভাবে শিক্ষক পদ পেতে আবেদন করেছি। কিন্তু আমি নাকি বিএনপি করি এমন অসত্য কথা তুলে দিয়ে আমার সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেয়ও আমাকে চাকুরী না দেয়ার ব্যবস্থা কৌশলে পাকাপোক্ত করে রেখেছে। যে কারনে রাগে ক্ষোভে কাস বর্জন করে ওই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছি। আমার নিয়োগ পরীক্ষার ইন্টারভিউ কার্ডও আমাকে দেয়া হয়নি।
উক্ত স্কুলেরই এক সময়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য প্রভাষক মুকবল আহাম্মেদ বলেন, সবার মতামত না নিয়ে এক নায়কতন্ত্রের শাসনের মত প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে এক সময়ে সেই প্রতিষ্ঠানের মৃত্যু ঘটাই স্বাভাবিক।
স্কুল পরিচালনা কমিটির বর্তমান সদস্য ফারুক বলেন, স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। তবে দীর্ঘ বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক পদে চাকুরী করা দুই দক্ষ শিক্ষক মাসুম ও টুটুল এখন কাস বর্জন করে স্কুলে না আসার বিষয়টি জেনে ব্যক্তিগত ভাবেই আমি হতাশ হয়েছি।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক , উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি রফিকুল আমিন কাজলের বক্তব্য নিতে গতকাল মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রধান শিক্ষকের মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষক নিয়োগ কমিটির এক সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাকি বিল্লা বলেন, স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক সব নিয়মনীতি মালা মেনেই প্রার্থীদের নামের তালিকা নিয়োগ বোর্ডে দেয়। তবে আমারা যারা সরকারের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তারা সরকারের উপরিমহলের নির্দেশ কার্যকর করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় থাকে না।