স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের দু’পাশের প্রায় আড়াই হাজার গাছ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে সড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথের কুমিল্লাস্থ গাছ পালন বিভাগের কর্তকর্তারা গাছ কাটার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে ফরিদগঞ্জবাসী চরম ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। গাছ কাটা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।
এমনিতেই নানা কারণে হুমকির মুখে দেশের পরিবেশ তথা জলবায়ু। আবহাওয়া বা জলবায়ুকে জনবান্ধব করে তুলতে সরকার প্রতিনিয়ত গাছ লাগিয়ে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি চক্রের লালসার শিকার হচ্ছে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের দু’পাশের ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার গাছ। ইতিমধ্যে গাছগুলোর একটি অংশ কেটে সেখানে লাল রঙে নম্বর বসিয়ে জানান দিচ্ছে- তোমাদের আয়ু শেষ। খুব অল্প সময়ে কেটে ফেলা হবে রাস্তার দু’পাশের সবুজে ঘেরা গাছগুলো।
পরিবেশবিদদের দৃষ্টিতে গাছগুলো কাটা হলে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ু, বেড়ে যাবে উষ্ণতা। গাছ কেটে ফেলার খবর জানতে পেরে ইতোমধ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠছে সর্বস্তরের জনগণ।
সড়ক ও জনপথের বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের গাছ পালন বিভাগের এসও জহিরুল ইসলামের সাথে সড়কের দু’পাশের গাছগুলো কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জের বর্ডার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকার হাইওয়ে সড়কের দু’পাশে ৩৫ বছরের জন্য ১৯৯৫ সালে লিজ নিয়েছেন বাগাদী এলাকার জনৈক মঞ্জু পাটওয়ারী। তিনি এ গাছগুলোর সুবিধাভোগী।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩শ’ ৯৬টি গাছ মার্ক করা হয়েছে নিলাম দেয়ার জন্য। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ হলে গাছগুলো নিলামে বিক্রি হবে। বিক্রি হওয়া অর্থের অর্ধেক পাবেন তিনি এবং বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
বিষয়ে তিনি বলেন, লিজপ্রাপ্ত ব্যক্তির লাগানো গাছের বাইরে অন্য গাছ কাটা হবে না। কিন্তু সরেজমিনে এ চিত্র ভিন্নœতর। নতুন ও পুরাতন সব গাছেই লিজের জন্য মার্ক করা হয়েছে।
এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ফরেস্ট অফিসার সফিকুল আমিন আপেল জানান, আমাদের না জানিয়ে সড়ক বিভাগ এ সড়কের ফরিদগঞ্জ উপজেলা ফরেস্ট বিভাগের লাগানো চৌতুরা এলাকা থেকে বর্ডার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তার গাছেও কাটার জন্য মার্ক করেছে। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ্রত দত্ত গাছ কাটার বিষয়ে জানান, সড়ক ও জনপথের সামাজিক বনায়ন বিষয়ে কুমিল্লায় একটি শাখা আছে। তারা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাছাড়া চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের গাছ কাটার ফাইলপত্র এখনও আমার কাছে আসেনি।
গাছ কাটার বিষয়ে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবদিন জানান, হাইওয়ে সড়কের গাছের সাথে উপজেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট নয়। তারপরও পরিবেশ বিপন্ন হবে এমন কাজ আমরা সমর্থন করি না। তাছাড়া গাছগুলো অপরিপক্ক হলে তা না কাটাই উচিৎ। তবে বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসককে জানাবো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী গাছ কাটার পরিকল্পনার কথা শুনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশবান্ধব সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ গড়ার কাজে যখন ব্যস্ত তখন একটি চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের সুন্দর পরিবেশকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। আমরা এ হীন কাজ করতে দেব না। প্রয়োজনে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজের অধ্যক্ষ ড. মহেববুল্লাহ খান বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার ও ভয়াবহ উষ্ণতায় এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় বিপন্ন। তার উপর আমাদের এলাকার সুন্দর পরিবেশের হাজার হাজার মানব উপকারী গাছ কেটে ফেললে দারুণভাবে কষ্ট পাবো। তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ গাছের সুবিধাভোগীদের অন্যভাবে সহযোগিতা করে গাছগুলো বাঁচানো।
পরিবেশ আন্দোলনের চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর রতন মজুমদার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার দু’পাশের গাছ কাটার কারণে মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রতি বছর রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশও নষ্ট হয়। অতিরিক্ত বৃক্ষনিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে গিয়ে বাসযোগ্য পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের সংগঠন এ ধরনের কাজের প্রতিবাদ করে। তাই আমি বলবো উপযুক্ত পরিবেশ করা ছাড়া গাছগুলো কাটা উচিৎ নয়।
ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল গাছ কাটার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গাছ আমাদের জীবন বাঁচায়। সুতরাং অন্যায়ভাবে গাছ কাটতে দেয়া হবে না। সমপরিমাণ গাছ লাগিয়ে এবং তা বড় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তার পাশের কোন গাছ কাটতে দিতে পারি না। প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাবো।
ফরিদগঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি মামুনুর রশীদ পাঠান বলেন, রাস্তার পাশের গাছগুলো আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। আমাদের উচিৎ হবে গাছগুলোকে রক্ষা করা। সুতরাং গাছগুলো না কেটে সুবিধাভোগীকে অন্যভাবে সহযোগিতা করা উচিৎ।