ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি :ক্ষমতার দাপাট দেখিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোঃ সহিদ উল্লা তপাদার ও ডেপুটি কমান্ডা আলী আহাম্মদ আর্থিকভাবে বেশ স্বচ্ছল এবং পাকা দালান ও প্রচুর জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারিভাবে দেয়া আবাসিক সুবিধা নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। আও’মী মুক্তিযোদ্ধা এ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃত অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চিত করে তারা নিজেরাই এই সুবিধা পাওয়ার জন্য ১০জনের তালিকায় নিজেদের নাম রেখেছেন। এছাড়া অন্য যে ৮জনকে মনোনিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৬জনও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কর্মকর্তা। এরা সবাই কোন নাকোন ভাবে কোটি ও লাখপতি বলে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা জানান। অর্থাৎ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমিটির ১১জনের মধ্যে ৮জনই আছেন এই বিশেষ সুবিধার তালিকায়। এদের অধিকাংশ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও প্রচুর জমিজমা এবং ঘর-বাড়ির মালিক। তালিকাটি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ওই ভুয়া তালিকা বাতিল করে প্রকৃত অসহায়দের নিয়ে নতুন করে তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় ১০জন করে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাকে আবাসন সুবিধা দেয়ার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহন করেছে। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই আলোকে স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসনকে উল্লেখিত প্রকল্পের জন্য ১০জন ভূমিহিন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা করে জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। ফরিদগঞ্জে গত বছরের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এক সভায় ১০জন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকার এক নম্বর ক্রমিকে উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার আলী আহাম্মদের নাম উল্লেখ করা হলেও উপজেলা কমান্ডার মোঃ সহিদ উল্লা তপাদার কৌশল করে তার নামটি রেখেছেন চার নম্বর ক্রমিকে। অর্থাৎ কেউ তালিকা দেখলে শুরুতেই যাতে তার নাম না দেখেন।
তালিকার অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা হলেন:- সফর আলী সওদাগার (রুপসা), মোঃ আবুল হোসেন (কড়ৈতলী), হাবিলদার সরদার মোঃ মজিবুর রহমান (হাঁসা), নাছির আহম্মদ পাটওয়ারী (গল্লাক), সৈয়দ আহম্মদ (চরপোয়া), মোহাম্মদ উলা তালুুকদার (কড়ৈতলী)। তারা প্রায় সবারই পাকা দালান ও প্রচুর সম্পত্তির মালিক। অপর দিকে উপজেলা সবচেয়ে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা যাদের রাত্রী যাপনের ঘরও নেই তাদের মধ্যে রনাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা আঃ জব্বার পাটওয়ারী (কাছিয়াড়া),আঃ জলিল (কেরোয়া), মফিজ ভূইঁয়া (ভাটিরগাঁও),আঃ মান্নান (বড়ালী),লুৎফুর রহমান (খাজুরিয়া),হারুনুর রশিদ(চর বসন্ত), আঃ মান্নান (বড়গাঁ), ওহিদুর রহমান (ভাটিরগাঁও), সিরাজুল ইসলাম (কাছিয়াড়া), এরা সবাই রোগে শোকে দুঃখে দুঃখে মরছে। এদের মধ্যে অনেকেই অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে পরিবার চালাচ্ছেন। অনেকের মাথা-গোঁচানোর ভিটা মাটিও নেই। ক্ষুব্দ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল এ অনিয়মের প্রতিবাদ করে বেশ কয়েকবার সংসদে তালা লাগিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর এ অনিয়মের লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
জানা গেছে, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি উপজেলায় সরকারি খরচে ৫তলাবিশিষ্ট একটি করে ভবন করা হবে। সেই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ২টি করে মোট ১০টি ফ্ল্যাট তালিকা ভুক্ত ১০জন অসহায় মুক্তিযোদ্ধাকে বসবাসের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্ধ দেওয়া হবে। এই ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, আমার আগের ইউএনও’র সময়ে এ তালিকা হয়েছে। তাছা এমন একটি গুরুত্বপূর্ন তালিকা করার ক্ষেত্রে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ডেপুটি কমান্ডারের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এ ক্ষেত্রে তারা যদি নিজেরা স্বচ্ছল হয়ে তাদের নাম অস্বচ্ছলের তালিকায় দিয়ে দেয় তা দুঃখজনক বিষয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদ উল্লা তপাদার বলেন, মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসরন করে আমরা এই তালিকা প্রনয়ন করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। এ দিকে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার জানান অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধদের তালিকা প্রনয়ন ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।