লেন্ডল সিমন্সের অর্ধশতক আর ড্যারেন স্যামির শেষের ঝড়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ভালো সংগ্রহ গড়েও বরিশাল বুলসকে হারাতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। ক্রিস গেইলের অভাব ভুলিয়ে দেওয়া এক ইনিংসে বরিশালকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন সাব্বির রহমান।
ফাইনালের উঠার লড়াইয়ে ৫ উইকেটে জিতেছে বরিশাল। এই আসরে এ নিয়ে তিন বারের দেখায় তিন বারই রংপুরকে হারাল মাহমুদউল্লাহর দল।
রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৬০ রান করে রংপুর। জবাবে ৩ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল।
আগামী মঙ্গলবার ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে বরিশাল।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বরিশালের। অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশে খেলতে চলে যাওয়া ক্রিস গেইলের অভাব ভালোভাবেই অনুভব করেছে তারা।
রনি তালুকদারের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন সিকুগে প্রসন্ন। তৃতীয় ওভারে ১০ রানের ভেতর বিদায় নেন দুই জনই। আরাফাত সানির বলে থিসারা পেরেরাকে ক্যাচ দেন রনি তালুকদার। সাকিব আল হাসানের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন প্রসন্ন।
দলে ফেরা শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে আগের ম্যাচেই ছন্দে ফেরা সাব্বিরের সঙ্গে ১২৪ রানের চমৎকার জুটি প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যায়। রান আউট হওয়ার আগে ৪৪ রানের ভালো একটি ইনিংস খেলেন শাহরিয়ার। তার ৪০ বলের এই ইনিংসটি সাজানো ৬টি চারে।
এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি সাব্বিরও। তার ৭৯ রানের দারুণ ইনিংসটি থামে ড্যারেন স্যামির দুর্দান্ত এক ক্যাচে। লং অন সীমানায় শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে বল তালুবন্দি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডার।
৪৮ বলে খেলা সাব্বিরের ৭৯ রানের ইনিংসটি ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ। চলতি আসরে এটাই তার প্রথম অর্ধশতক।
সাব্বিরকে ফেরানো ১৮তম ওভারে পাঁচ রান দিয়ে রংপুরের আশা বাঁচিয়ে রাখেন থিসারা।
জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ১৯তম ওভারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে চাপে পড়ে যায় দলটি। স্যামির পরের বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ সরিয়ে নেন রায়াদ এমরিট। স্লোয়ার বলটি ডিপ মিডউইকেট দিয়ে গ্যালারিতে নিয়ে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ক্রিকেটার।
থিসারার করা শেষ ওভারে ৮ রান নিতে তিন বলের বেশি লাগেনি কেভন কুপার-এমরিটের।
এর আগে সিমন্সের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন বিপিএলে প্রথমবারের মতো খেলা রাসেল আল মামুন, যিনি দলে এসেছেন জহুরুল ইসলামের চোটে। সিমন্স-রাসেলের ৫২ রানের জুটি রংপুর ভালো সূচনা এনে দেয়, যার অভাব প্রায় পুরো টুর্নামেন্টে অনুভব করেছে দলটি।
রাসেলকে (২০) ফিরিয়ে ৮.৩ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার সিকুগে।
নিয়মিত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার নামের তিন নম্বরে। টুর্নামেন্টে নিজের ছায়া হয়ে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। কুপারের বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে মোহাম্মদ সামির চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন তিনি।
সিমন্সকে স্ট্রাইক দেওয়ার দিকেই ছিল সাকিব আল হাসানের মনোযোগ। প্রসন্নর বলে ডিপ উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পর রানের গতি বাড়াতে চেয়েছিলেন রংপুরের অধিনায়ক। সফল হননি, আল আমিনের বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি ব্যাটসম্যান সিমন্সের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটিতে সাকিবের অবদান ১৩ রান।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন সিমন্স। সামির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৭৩ রানের চমৎকার এক ইনিংস উপহার দেন তিনি। ৫৭ বলে খেলা ইনিংসটি সাজানো ৯টি চার ও দুটি ছক্কায়।
কুপারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দ্রুত সিমন্সকে অনুসরণ করেন শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার থিসারা।
দ্রুত তিন উইকেট হারালেও রংপুরের রানের গতিতে ভাটা পড়তে দেননি স্যামি। ১০ বলে ২৩ রানের ঝড়ো ইনিংসে দলের সংগ্রহ দেড়শ’ পার করেন তিনি।
শেষ ওভারে চার উইকেট হারানোয় রংপুরের সংগ্রহ আরও বড় হয়নি। মোহাম্মদ নবি ও স্যামি ফিরে যান ক্যাচ দিয়ে। রান আউট হন মোহাম্মদ মিঠুন ও সাকলাইন সজীব।
তবে গেইলবিহীন বরিশালের সামনে ১৬১ রানের লক্ষ্য আর বড় মনে হয়নি নিজেকে ফিরে পাওয়া সাব্বিরের জন্য। শাহরিয়ারের সঙ্গে তার শতরানের জুটিই দুই দলের মধ্যে ব্যধধান গড়ে দেয় শেষ পর্যন্ত।