প্রতিনিধি
সুবজ গাজী এবার চাঁদপুর শহরের গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ (৪.১৩)-এ পেয়েছে। যার রোল নং- ১৫৬২৬৫। সে স্কুল জীবনের সীমানা পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারবে কী না চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষা নিতে কোথাও থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতো সে।
সবুজ যখন ৫ বছর বয়সের তখন তার বাবা মোঃ মুসলিম গাজী মারা যান। তার বাবা ফিলিপস কোম্পানির ভ্যানচালক ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের দেখাশোনা করতেন দাদা মোঃ কলিমুল্লাহ গাজী। তিনি ২০০৭ সালে মারা যান এবং তার স্ত্রী (সবুজের দাদী) ওই বছরই স্তন ক্যান্সারে মারা যান। বাবা ও দাদা-দাদীর মৃত্যুতে চরম বিপাকে পড়েন সবুজের মা জোৎস্না বেগম। সবুজের একটি ছোট বোন সাথী (১৩)। তাও সে অভাব অনটনের কারণে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে বন্ধ করে দেয়। কোনো জমানো টাকা ছিলো না তাদের। সম্বল বলতে ছিলো কেবল একটি থাকার ঘর। তখন নিজেকেই নিজে সাহস জুগিয়েছে সবুজ। গ্রামের লোকজনও পাশে ছিলো। তবে কোনো বাধাই তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। পড়ালেখার পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন জনের কাজ ও টিউশনির টাকা দিয়ে চালাতো সংসার। এর ফাঁকে ছেলের কষ্ট দেখে মা জোৎস্না বেগম সংসারের হাল ধরতে চাকুরি নেন একটি এনজিওতে। মা ও ছেলের উপার্জনের টাকা দিয়ে চলে সংসার। তার মেধার কথা স্কুল কর্তৃপক্ষও জানতো। তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার ফল প্রকাশের পর চাঁদপুর শহরের পৌর ১৫নং ওয়ার্ডের উত্তর বিষ্ণুদী জিটি রোড গাজী বাড়িতে কথা হয় সবুজের সাথে। অনুভূতির কথা জিজ্ঞেস করতেই দু� চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায় তার। তারপর নিজেকে কিছুটা স্থির করে বলে মনে হচ্ছে আমি কতো ভালো রেজাল্ট করেছি। এলাকাবাসী আমাকে দেখতে এসেছে। অথচ আমি আরেকটু সহযোগিতা পেলে গোল্ডেন এ প্লাস পেতাম। সবাই আমাকে কতো আদর করতো। অথচ আমি এ- পাওয়ায় এ অবস্থা।
মেধাবী শিক্ষার্থী সবুজ বলে অন্যের কাজ করে পড়েছি। আর সংসারের খরচ দিয়েছি। কখনো খেয়েছি, আবার কখনো না খেয়ে থেকেছি। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ভর্তির চিন্তায়। উচ্চ শিক্ষা নিতে কোথাও থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেলে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতাম। তবে আমার এতোটুকু আসার পেছনে বিদ্যালয়ের মানিক লাল সরকার ও নুরুল ইসলাম স্যারের অবদান অনেক। আমি যাতে আগামীতে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারি সে জন্যে সবার কাছে দোয়া চাই। সবুজের বংশের পূর্ব পুরুষ থেকে এ পর্যন্ত যারা আছেন তাদের মধ্যে সবুজই এসএসসি পাস করেছে। কষ্ট সাধ্য করেই সে পড়ালেখা চালিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানান, এ বংশের লোকেরা বেশি একটা পড়ালেখা করে না। বেশি জোর প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সবুজ যেনো গোবরে পদ্ম ফুল।
উল্লেখ্য, মোঃ সবুজ গাজী ৬৫নং দক্ষিণ তরপুরচণ্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-এ ও গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে এ- পেয়েছে।