রাজধানীসহ ১৩টি এলাকায় ভূগর্ভস্থ ফাটল
বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
দেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা গতকালকের ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই—এমন অভয় দিলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার কাছে অবস্থিত হওয়ায় বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিমুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ঐ কম্পন হতে পারে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। সব এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।
গত বছর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরে মাটির নিচে ফল্টলাইন রয়েছে। সেখানে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন ধসে পড়বে। অন্যদিকে সিলেটের ডাউকি চ্যুতিরেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫টি ভবন ধসে পড়বে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূরকৌশল বিভাগের হিসাবে, ঢাকা শহরে মোট ভবন আছে ২১ লাখ। এর মধ্যে ৬ লাখ ভবন ছয়তলা বা তার চেয়ে উঁচু। বুয়েটের পক্ষ থেকে ঢাকার কোন ভবন কতটা ভূমিকম্পসহনশীল, তা নির্ধারণ করে তালিকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজউক এই সুপারিশ মানেনি।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার সাহা বলেন, রিখটার স্কেলে মাত্রা বেশি—এমন ভূমিকম্পে বড় ধরনের ঝুঁকি আছে ঢাকার। এজন্য আমরা সবাইকে সর্তক করছি। একই সঙ্গে ভবন তৈরির ক্ষেত্রে সকল নিয়ম মেনে ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ঢাকার আশপাশে এ রকম ৩-৪ বা ৫ মাত্রার অনেক ভূমিকম্প হয়েছে। এ রকম ছিল গতকাল সকালের ভূমিকম্পটি। এতে আতঙ্কের কিছু নেই।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নদীপথ নিয়ন্ত্রণ করে যে ফাটলরেখা, তা দিয়ে যখন ভূমিকম্প হয়, সেই ভূমিকম্প বড় হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৫ শতাংশ মূলত লাল মাটির ওপরে গড়ে ওঠা। এই মাটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। বাকি ৬৫ শতাংশ এলাকা মূলত নদীর তীরবর্তী কাদামাটি ও বালুমাটির এলাকা। মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পূর্বাচল নতুন শহর এ ধরনের মাটির। বেশির ভাগ বেসরকারি আবাসন প্রকল্প মূলত নরম মাটিতে গড়ে উঠেছে। ঢাকায় ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূকম্পন হলে নরম মাটির ভবনগুলো ভেঙে যাওয়া বা হেলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বড়-বড় শহরগুলোর ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে যদি ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তবে এসব শহরের অনেক বিল্ডিং উলটে পড়তে পারে।