বয়স দিয়ে নয়, আবেদনসহ সব তথ্য যাচাই করেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর মগবাজারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো আবেদন উপজেলা ও মহানগর কমিটি যাচাইবাছাইয়ের পর ওই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা কি না, তা নির্ধারণ করা হবে।
সূত্র জানায়, জামুকার ২৫তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, একাত্তরে বয়স ১৫ বছরের নিচে ছিল, এমন কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। তারপর এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তি মন্ত্রণালয়ে আসতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় একাত্তরে যাঁদের বয়স ১৩ বছরের নিচে ছিল, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন বিধান রেখে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠায়। তবে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কম বয়সীদের মধ্যেও অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪টি এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন জমা হয়েছে। আবেদনে উপজেলা বা জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি, এমন আবেদন পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৫৫৩টি। সারা দেশে উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে আবেদন যাচাইবাছাইয়ের জন্য ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। যাচাইবাছাইসহ স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার কাজ চলতি বছরের ২৬ মার্চ শেষ হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় আবেদন যাচাইবাছাই কমিটির প্রধান হবেন স্থানীয় সাংসদ। কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি, জেলা কমান্ডার বা তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি, উপজেলা কমান্ডার, যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জামুকার সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকবেন। তবে কমিটির সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে। সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা না হলে মন্ত্রণালয় ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে একজন প্রতিনিধি দেবে। মহানগরে সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। সদস্য থাকবেন আরও পাঁচজন। যাচাইবাছাইয়ের সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত থাকবেন। আবেদনকারী বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কেউ আপত্তি জানালে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি কোথায়, কার অধীনে, কী কী অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের (বীরাঙ্গনা) তালিকা হবে ভিন্ন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে যাঁরা নবম, দশম শ্রেণির ছাত্র বা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন, তাঁদের প্রকৃত বয়স তখন যথাক্রমে ১৫ থেকে ১৭ বছর হলেও নিবন্ধনে বয়স প্রকৃত বয়সের চেয়ে দুই থেকে তিন বছর কম দেখানো হয়। ফলে একাত্তরের ২৬ মার্চ যেসব ছাত্রের প্রকৃত বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছর ছিল, তাঁদের এসএসসির সনদ অনুসারে তখন বয়স ছিল ১৩ বা ১৪ বছর। এ ছাড়া ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী অনেক কিশোর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা/যুব শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।