বাংলা সনের প্রচলনটা বেশ চমকপ্রদ। প্রজাদের কাছ থেকে নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বাংলা সন গণনা চালু করেন মোঘল সম্রাট আকবর।
বাংলা সনের মতোই চমকপ্রদ ভাবে প্রচলন ঘটে পুরনো হিসেব চুকানোর আনুষ্ঠানিক উৎসব ‘হালখাতা’র। মোঘল আমলে চৈত্রের শেষের দিকে প্রজারা সকল প্রকার খাজনা তথা ট্যাক্স প্রদান করতো রাজকোষাগারে।
পুরনো হিসেব চুকিয়ে খোলা হতো নতুন খাতা। আর বাকির খাতা শূন্য হওয়ার সুবাদে রাজ দরবার থেকেও প্রজা সাধারণকে নানাভাবে আপ্যায়ন করা হতো।
সেই থেকে চলে আসছে বাংলা সনের শেষের দিকে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অতীত বছরের হিসেবের খাতা শূন্য করে নতুন খাতা হালনাগাদের রেওয়াজ। এটা হালখাতা বলেই বেশ পরিচিত, বিশেষ করে পুরনো ঢাকা আর গ্রামাঞ্চলে।
রোববার বাংলা ১৪২০ সালের আগমন ঘটবে। বিদায় নিয়েছে ১৪১৯। নতুন বছরের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও নতুন খাতা হালনাগাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
অভিজাত নগরীতে আগের মতো হালখাতার প্রচলন তেমন একটা দেখা না গেলেও পুরনো ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারি বাজার, শ্যাম বাজার ও ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা এখনও ধুমধাম করে পুরনো হিসেব চুকিয়ে নতুন খাতা খোলেন।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বৈশাখের হালখাতা উৎসবকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী একদিন পরে হালখাতা করবেন হিন্দু ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ তিথি অনুযায়ী সোমবার তাদের হালখাতা। এই দিনে হিন্দু ব্যবসায়ীরা ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে নতুন খাতা খুলবেন। এ দিন গণেশ পুজার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করবেন তারা। নতুন বছরে লাভের আশায় ব্যবসার দেবতা গণেশকে নতুনভাবে সাজিয়ে দোকানে বসানো হবে।
এছাড়া নতুন হিসেবের খাতাকে নিয়ে মন্দির থেকে আশীর্বাদ নিয়ে আসবেন তারা। এরপর সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হবে হালখাতা উৎসব। পুরান খাতার বিদায় দিয়ে নতুন খাতা বরণ করা হবে। এই দিনে সকল পুরাতন হিসাব চুকিয়ে দোকানিরা তাদের ক্রেতাকে মিষ্টিমুখ করাবেন, বর্তমানে মিষ্টির পাশাপাশি বিশেষ বাঙালিয়ানা খাবারও পরিবেশন করা হয়।
হালখাতার প্রস্তুতি সম্পর্কে কথা হয় তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও অমিত জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী কমল বসাকের সঙ্গে।
তিনি চাঁদপুরনিউজকে বলেন, “পঞ্জিকা অনুযায়ী সরকারি হিসাবের সঙ্গে আমাদের হালখাতার মিল নেই। আমরা একদিন পরে হালখাতা শুরু করে থাকি। এই দিনে আমরা ব্যবসার দেবতা গণেশ পুজার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করে থাকি। এর পর ঢাকেশ্বরী মন্দির, কালি মন্দির অথবা অন্য কোনো মন্দির থেকে ট্যালি খাতায় (হিসেবের খাতা) ভগবানের আশীর্বাদ নিয়ে আসি। এর পর সাড়ে দশটার সময় হালখাতা শুরু হয়ে চলে বেলা ২টা পর্যন্ত। অনেকে আবার সারাদিন হালখাতা করে থাকে। এর মধ্যে আমরা ক্রেতাকে সাধ্য মতো আপ্যায়ন করে থাকি।”
হালখাতাবিমুখ হয়ে পড়ছেন মুসলমান ব্যবসায়ীরা। তবে ঢাকার ইসলামপুরের শাড়ি-কাপড় ব্যবসায়ীরা এখনও ধুমধাম করে হালখাতা উৎসব করে থাকেন। তারা সরকারি হিসেব অনুযায়ী হালখাতা করে থাকেন। দোকানকে উৎসবমুখর করে সাজিয়ে হালখাতার দিন সকালে দোকানে দোকানে আগর বাতি প্রজ্বলন ও দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। ক্রেতাকেও করা হয় সাধ্য মতো আপ্যায়নের ব্যবস্থা।
ইসলামপুরের পপুলার ক্লথ এজেন্সির স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া চাঁদপুরনিউজকে বলেন, “হালখাতার সকল প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা শুধু পহেলা বৈশাখের। এই উপলক্ষ্যে আমি ২০ থেকে ২৫ মণ মিষ্টির অর্ডার দিয়েছি, ক্রেতাকে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য। এই দিনে আমরা সকল পুরনো হিসেব মিটিয়ে নতুনভাবে হিসেব- নিকেশ শুরু করে থাকি, খুলে থাকি নতুন খাতা ।