চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের সাপদী গ্রামের গৃহবধু রাহিমা আক্তার হত্যাকন্ডে অভিযুক্ত আসামীরা ১মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত আটক হয়নি। আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে অন্যত্রে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশকে জানালেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে রাহিমার বড় ভাই ইব্রাহীম শেখ জানিয়েছেন।
রাহিমার পিতা আঃ হাই শেখ জানান, ৬ নভেম্বর দিনগত রাতে স্বামী আনোয়ার ও শ্বশুর পরিবারের হাতে খুন হন রাহিমা। এই ঘটনায় ৭ নভেম্বর তিনি চাঁদপুর মডেল থানায় আনোয়ারকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৩)। ১ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামীকে আটক করতে পারেনি। বিবাদী পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ার কারণে টাকার বিনিময়ে ময়না তদন্তে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে চাঁদপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতোয়ার রহমানের আদালতে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দরখাস্ত করেছেন বলে জানান আঃ হাই শেখ।
৫ নভেম্বর শনিবার সকালে রাহিমার বাগাদী ইউনিয়নের বড় শেখ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের শোকে মা সালেহা বেগম এখনো অঝরে কাঁদছেন। মেয়েকে হারিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়েগেছে তাদের পরিবার। পরিবারের ছোট মেয়ে ছিলো রাহিমা। এ বছর স্থানীয় ফরক্কাবাদ কলেজ থেকে এইএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মেয়ের স্মৃতির কথা বলে বার বার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
রাহিমার চাচা আবুল বাশার শেখ জানান, বিবাদী পক্ষ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে প্রশাসনে তদ্বির চালাচ্ছে। আমরা পুলিশ প্রশাসন, আদাতের কাছে সু-বিচার ও সহযোগিতা কামনা করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাপদী গ্রামের বাসিন্দা জানান, ৬ নভেম্বর রাতে রাহিমার সাথে কি হয়েছে, এসব বিষয়গুলো আনোয়ারের চাচাত ভাই চান্দু মিয়া, মরহররম, ভাবি রতœা বেগম, ভাতিজা রিয়াদ অনেকেই জানতেন। কিন্তু তারা আইনী জটিলতায় পড়ার ভয়ে মুখ খুলছেন না।
বালিয়া ইউনিনের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ঢালী জানান, ঘটনার পর ওই বাড়িতে আমি গিয়েছি। আমি এ বিষয়ে কোন দায়-দায়িত্ব নিতে পারবোনা বিধায় পুলিশকে অবহিত করেছি।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান, রাহিমা হত্যার অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেন তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। রাহিমার ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা লেখা হয়েছে। পুলিশ মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ আগষ্ট সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিনের মৃত আঃ জলিল পাটওয়ারী ছেলে আনোয়ার হোসেনের সাথে রাহিমা আক্তারের বিয়ে হয়। গত ৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় রাহিমার সাথে তার স্বামীর ঝগড়া বিবাদ ও চিৎকার শুনে পাশের ঘরের লোকজন। পরদিন সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে দূরে একটি ছোট গাছের সাথে রাহিমার ঝুলন্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। গাছটির নিচে কাদামাটি থাকলেও রাহিমার পায়ে কোন মাটির চিহ্ন ছিলো না।