শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই বাড়ছে দেশের তাপমাত্রা। জলবায়ু পর্যবেক্ষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ায় প্রকৃতির বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিকতা হারাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মত মৌসুমি জলবায়ুর দেশে শুধুমাত্র ঋতু বৈচিত্র্যকে নয়, এর বিরূপ প্রভাব মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করবে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রি বেশি। আবহাওয়ার এই অস্বাভাবিকতায় বদলে যাচ্ছে ঋতুর বৈশিষ্ট্য। আগেভাগেই আঘাত হানছে কালবৈশাখী, চলছে বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়াবিদ শাহ আলম বলেন, ‘তিন ঋতু অন্য তিন ঋতুর মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষেরও এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে, নিজেদের অভ্যাসগুলোর পরিবর্তন করতে হবে।’
উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি চীন-ভারতের মতো দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় বায়ুম-লে বাড়ছে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা। এ কারণে বেড়েই চলছে বৈশ্বিক উষ্ণতা।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০-৬০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি। বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বাংলাদেশে দ্রুত হারে বাড়ছে তাপমাত্রা। ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দশ দেশের তালিকাতেও আছে বাংলাদেশ নাম।
জলবায়ু পর্যবেক্ষক আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। কোন বছর স্বাভাবিক আর কোন বছর অস্বাভাবিক আচরণ করবে। দেখা যাবে ফুল ফুটেছে কিন্তু তাকে পরাগায়ন করার পোকা তখনো আসেনি। এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে ৫০ বছর পর আমরা এর বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবো।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রার কারণে জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে বাংলাদেশে। ছয় ঋতুর স্বাভাবিক চক্রে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। সময়ের আগেই শীতের বিদায় আর অসময়ে ঝড়-বৃষ্টিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হিসেবেই দেখছেন তারা।
গবেষকেরা মনে করেন, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়া, নদীর দিক বদল অথবা মরে যাওয়ার ফলে শক্তিশালী হচ্ছে কালবৈশাখী, বাড়ছে বন্যাসহ নানান প্রাকৃতিক দূর্যোগ। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ঋতু বৈচিত্র্যই সৌন্দর্য নয়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখতে এখনই সচেতন হবার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি জলবায়ু অভিযোজনের দিকে সরকারকে আরো বেশি নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।