ওমর ফারুক :
——————
আর এক মাস সাতদিন পেরুলেই নতুন বছর ২০১৫। আর নতুন বছর মানেই বাড়িওয়ালাদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা। বাড়িভাড়ার বৃদ্ধির আশঙ্কায় ভাড়াটিয়াদের এখন থেকেই ওষ্ঠাগত প্রান। জানুয়ারি আসার আগেই শুরু হয়ে যায় বাড়িওয়ালাদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। বাড়িওয়ালার সঙ্গে চলে ভাড়াটিয়াদের ঝগড়া-বিবাদ। এই বিবাদ গড়াচ্ছে থানা, পুলিশ আদালতে। তারপরও মুক্তি নেই ভাড়াটিয়াদের। আয়-উপার্জন না বাড়লেও নতুন বছরের প্রথম মাস থেকে গুনতে হবে বাড়িভাড়ার অতিরিক্ত টাকা। তবে কয় মাস বা বছর পরপর বাড়িভাড়া বাড়বে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এ কারণে নতুন বাড়িভাড়া আইনের দাবি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত মামলার রায় হচ্ছে না। রাজধানীর অন্যতম প্রধান সমস্যা বাড়িভাড়া সংশ্লিষ্ট হয়রানি ও নির্যাতন নিরসনে চার বছর আগে হাইকোর্টে রিট করা হলেও এখনো ওই মামলার রায় হয়নি। দীর্ঘ সময় নিয়ে রুলের শুনানি শেষ করে ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। দুই বছর হতে চললেও কবে এ রায় দেয়া হবে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ তা বলতে পারছেন না।
একজন মধ্যবিত্তকে যে বাড়ি এখন ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়, সে বাড়ি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে দিতে হবে কমপক্ষে ১১ হাজার টাকা, তার সঙ্গে যোগ হবে বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানির অতিরিক্ত বিল। এই অতিরিক্ত ভাড়ার ভয়ে ভাড়াটিয়াদের এখনি ছেড়ে দিতে হচ্ছে বর্তমান বাড়ি। একইসঙ্গে খুঁজে নিতে হচ্ছে সাধ্যের নতুন বাড়ি।। পুরান বাড়ি ছেড়ে ডিসেম্বরের মধ্যে উঠতে হবে নতুন বাড়িতে। রাজধানীর এ-গলি, ও-গলি, চলছে ভাড়াটিয়াদের বাড়ি খোঁজার প্রাণান্তকর চেষ্টা। তারপরও মিলছে না সাধ্যের বড়ি। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম উত্কণ্ঠায় আছেন ভাড়াটিয়ারা।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরই বাড়িভাড়া গড়ে ১৬ শতাংশ বাড়ছে। গত পাঁচ-ছয় বছরে অনেক ক্ষেত্রে ভাড়া দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যে বাড়ির ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা ছিল এখন তা ১২ হাজার টাকার ওপরে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় যে যেভাবে পারছেন ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করছেন। বাধ্য হয়েই রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত, গার্মেন্ট শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে তাদের কষ্টার্জিত আয়ের বেশিরভাগই বাড়িভাড়ার পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব মানুষ এখন অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। তবুও এ নিয়ে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা আসছে না।
মগবাজার এলাকার ভাড়াটিয়া অ্যাডভোকেট শাহেদ রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বর্তমানকে বলেন, ‘মাত্র ছয়মাস আগে এখানে উঠেছি। এরমধ্যেই ভাড়াবৃদ্ধির নোটিশ চলে এসেছে। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। না পোষালে বাসা ছেড়ে দিতে হবে— এটাই বাড়িওয়ালার নির্দেশ।’ ছয়মাস পর পর রাজধানীর বাড়িওয়ালারা মামার বাড়ির আবদারের মত ভাড়া বৃদ্ধি করে চলছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জানা যায়, ২৩ বছর আগে পাস হওয়া একটি ত্রুটিপূর্ণ আইন থাকলেও সেটির প্রয়োগ না থাকায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধি এখন বাড়িওয়ালাদের খেয়ালের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ আইনটি সংশোধন করে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বারবার দাবি উঠলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। এছাড়া আইনানুযায়ী দায়িত্ব না থাকার অজুহাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনও (ডিসিসি) এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্ধারিত বাড়িভাড়া ও ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের কতিপয় বিধান কার্যকর এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে কমিশন গঠনের দাবিতে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশে’র (এইচআরপিবি) করা এই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৭ মে হাইকোর্ট রুল জারি করে। রুলে ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না— তার কারণ জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতি মো. মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। পরবর্তীতে বেঞ্চটি ভেঙে যাওয়ায় এখানে আর রুলের শুনানি শুরু হয়নি। এরপর বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়া হয়। শুনানির মাঝপথে এই বেঞ্চটিও ভেঙে যায়। এরপর বিচারপতি মো. বজলুর রহমান ও বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসকে নিয়ে বেঞ্চটি পুনর্গঠন করা হয়। এ অবস্থায় ২০১২ সালের মে মাসে এই বেঞ্চে নতুন করে রুলের শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে একই বছরের ২৯ নভেম্বর রায় অপেক্ষামান (সিএভি) রাখা হয়।
এ বিষয়ে রিটকারী সংগঠনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বর্তমানকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে রুলের জবাব দাখিল না হওয়া, বেঞ্চ পরিবর্তন এবং বেঞ্চ ভাঙার কারণে আদালতের জারি করা রুলের শুনানি শেষ করতেই পার হয়েছে দীর্ঘ সময়। বর্তমানে রায়টি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রয়েছে।’ এক বছর রায় ঝুলে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায় অপেক্ষাধীন থাকা অবস্থায় এই বেঞ্চটিও ভেঙে গেছে। ফলে রায় দিতে সময় লাগছে। মনজিল মোরসেদ বলেন, জনগণের ভোগান্তি কমাতে জনস্বার্থে রিটটি করা হয়। রিটে নির্ধারিত বাড়িভাড়া নেয়া, বাড়িভাড়া আইনের কয়েকটি বিধান কার্যকর এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়। হাইকোর্ট এই দাবির পক্ষে রায় দিলে ভোগান্তি কমবে, জনগণ উপকৃত হবে। সেই রায় হবে একটি যুগান্তকারী রায়।
শিরোনাম:
বুধবার , ৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।