কচুয়া প্রতিনিধি:চাঁদপুর-১ কচুয়ার সাবেক এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা আ ন ম এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক চিঠি পাঠিয়েছেন। সমপ্রতি তারা চাঁদপুরের বিভিন্ন উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওই চিঠি পাঠান। ১৯৯৬-২০০০ সময়ে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে প্রতিমন্ত্রী মিলন একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়ে অনেক দুর্নীতি করেছেন এমন অভিযোগের তদনত্দের স্বার্থে দুদকের এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় ঢাকা হতে প্রেরিত বিভিন্ন পত্রের আলোকে জানা যায়, তাদের কার্যালয়ে দেয়া বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে তারা পত্র দিয়েছেন। চাঁদপুরে যে সকল দপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। দুদক তাদের অনুসন্ধানের স্বার্থে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৯৯৬-২০০০ সময়কালে তৎকালীন সরকারের বড় বড় উন্নয়ন কাজের রেকর্ড পত্রসহ সরকারি অর্থ ব্যয়ের পরিমাণও জানতে চেয়েছেন।
চাঁদপুরের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, ইতিমধ্যে তাঁরা প্রায় সকলেই পত্র পেয়ে যে যার মতো করে দুদকের চিঠির জবাব দিয়েছেন। তারা জানায়, এটা তাদের হাতে পৌঁছানো দ্বিতীয় চিঠি। এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাদেরকে একই বিষয়ে আরো একটি চিঠি দেয়া হয়েছিলো। তখনও তারা ওই চিঠির জবাব দিয়েছেন। দুদক সেই চিঠির জবাবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়েছেন। তারা জানান, এবারের চিঠিতে দুদক উল্লেখ করেছে এহছানুল হক মিলন এবং তাঁর স্ত্রী নামজুন নাহার বেবী তাঁদের নিজেদের নামে কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এছাড়াও তারা বিজনেস সিন্ডিকেট, পারিশা এন্টারপ্রাইজ, জেএন্ডএইচ ফার্ম, সিনকমসহ বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করেছেন। সেসব প্রতিষ্ঠানে ওই সময়ে কত টাকার কাজ হয়েছে তার হিসেবও পুরোপুরি জানাতে হবে। এবারে দুদকের চিঠিতে যে সকল তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা তাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দিয়েছেন। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ, প্রকল্প শুরু ও শেষের তারিখের পাশাপাশি সেসকল প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা কী তাও জানতে চেয়েছে। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের এ ব্যাপারে অর্থ বছর অনুযায়ী চক আকারে তালিকা দিতে বলেছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে নির্দেশনা অনুযায়ী দুদকের চিঠির জবাব দিয়েছেন। পাউবো চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ দাস দুদকের চিঠি প্রাপ্তি ও জবাব সম্পর্কে বলেন, বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে চাঁদপুরে তাঁর দপ্তরের মাধ্যমে তেমন কোন কাজ হয়নি। ফলে দুর্নীতিরও তেমন সুযোগ ছিল বলে মনে হয় না। তারপরও তিনি যতটুকু কাজ পেয়েছেন সে অনুযায়ী জবাব দিয়েছেন।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মহসীন উদ্দিন আহম্মেদ ভূঞা বলেন, দুদকের চিঠি অনুযায়ী তিনি যদ্দুর সম্ভব তথ্য দিয়েছেন। তার মতে প্রাপ্ত চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সে সকল প্রতিষ্ঠান ওই সময়ে তাঁর দপ্তরে উল্লেখযোগ্য কাজ করে নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, তিনিও চিঠি পেয়ে জবাব দিয়েছেন। তাঁর দপ্তরেও তেমন কোনো কাজ ছিলো না এবং দুর্নীতি হবার মতো তেমন কিছু তার চোখে পড়ে নি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ কবির বলেন, তিনি দুদকের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা দিয়েছেন। তবে ওই সময়ে চাঁদপুরে বড় মাপের তেমন কোনো উন্নয়ন তাঁর চোখে পড়েনি। সুতরাং দুর্নীতি কীইবা হবে তা তার বোধগম্য নয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিছুর রহমানের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সহকারী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, তারা ২-৩ মাস আগে দুদকের তেমন একটি চিঠি পেয়েছেন। ওই চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী জবাবে দেয়া হয়েছে। নতুন করে তারা আর কোনো চিঠি পাননি। এদিকে দুদকের চিঠির জবাব পুরানো নথিপত্র ঘাটতে গিয়ে প্রায় প্রতিটি দপ্তর বেশ ক’দিন মারাত্মক চাপে ছিলো বলে জানা গেছে। বর্তমান সময়ের কাজ কর্মের ফাঁকে পুরানো ফাইল পত্র ঘেঁটে প্রতিবেদন তৈরি করে স্ব স্ব অফিসে মারাত্মক চাপ বেড়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।