চাঁদপুর জেলা শহরেই নয়, এবারের বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেটে এগিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুর অনূর্ধ্ব ১৪ ক্রিকেট দল। চলতি বছরের শুরুতেই দলটি ফেনী মাঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলা দলের সাথে ক্রীড়া দর্শকদের ভালো মানের খেলা উপহার দিয়েছে।
জেলা অনূর্ধ্ব ১৪ দলটি নিয়ে জেলাবাসীসহ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটারগণও অনেক আশাবাদী। জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটার হান্নান সরকার, রাজিন সালেহ, গাজী আলমগীরসহ অনেকেই বলেছেন চাঁদপুরের এ দলটি যে কোনো জেলার চেয়ে অনেক এগিয়ে। দলটিতে রয়েছে খুবই ভালো মানের বেশ ক’জন খেলোয়াড়। আর এরা সবাই স্কুল পড়ুয়া ছাত্র।
সাবেক জাতীয় দলের ক্রিকেটার রাজিন সালেহ বলেছিলেন, এই দলটি যদি ঠিক মতো নার্সিং করা হয় তাহলে এদের থেকেই জাতীয় দলের ক্ষুদে ক্রিকেটার হিসেবে অনেকেই সুযোগ পাবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠকরা যদি এদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে এই খেলোয়াড়রা খেলার প্রতি অনেক আগ্রহ বাড়বে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু নিজেও এই দলের খেলার পারফরমেন্স নিয়ে অনেক খুশি। তিনি খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ব্যাপারে খোঁজখবর নেন এবং উৎসাহ প্রদান করেন। খেলোয়াড়দের সকল ভালো কিছুর সাথে তিনি সব সময় অগ্রগ্রামী থাকবেন বলে জানান।
চাঁদপুর জেলা অনূর্ধ্ব ১৪ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন : কামরুল হাসান, জ্যোতি, মোঃ মাসুম হোসেন, নাহিদ হাসান, ফয়েজ আহমেদ হিমেল, মোঃ ফয়সাল মিয়া, তোফায়েল আহম্মেদ, নাজিম উদ্দিন, মুনতাজ ইফতি, আবীর, শাওন, তোফায়েল, ওমর ফারুক, এ কে এম জুবায়ের, শান্ত সরদার, তাহমিদুর রহমান, জোবায়ের হোসেন, মোঃ সাইফুদ্দিন বাবু, মনিরুল ইসলাম আরমান ও রাকিবুল হাসান আলিফ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় জেলার এ দলটি ফেনী স্টেডিয়ামে অংশ নেয় ইয়াং টাইগার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। প্রথম রাউন্ডের ৪টি ম্যাচে খেলা দলটির খেলোয়াড়দের সাথে আলাপকালে তারা তুলে ধরেন তাদের খেলার বিভিন্ন কথা। পাঠকদের সুবিধার জন্যে তা তুলে ধরা হলো :
দলের অধিনায়ক কামরুল হাসান। বাবার নাম বাতেন বেপারী। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বসবাস করেন কুমিল্লা রোড এলাকায়। কামরুল পড়াশোনা করছেন গণি মডেল স্কুলের নবম শ্রেণীতে। এই টুর্নামেন্টের আগে কামরুল বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন। দলের অধিনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্বে এই দলটি প্রথম রাউন্ডের ৪টি ম্যাচেই জয়লাভ করে। তার নেত্বত্বে দল ফাইনালে না খেললেও সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত তিনি দলের দায়িত্ব পালন করেন। তার মতে, আমরা যদি আমাদের খেলাটা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে পারি তাহলে ইনশাল্লাহ আগামীতে আমরা আরও ভালো খেলা উপহার দিতে পারবো। আমাদের এবারের কোচিংটা অনেক সুন্দর হয়েছে। যে খেলোয়াড়কে যেখানে খেলার কথা কোচ সেভাবেই আমাদেরকে দিয়ে খেলিয়েছেন।
ক্রিকেটার মোঃ মাসুম হোসেন নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা রফিকুল ইসলাম সৌদি প্রবাসী। তার বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। পড়াশোনা করছেন মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সে অনেক দিন ধরেই খেলাধুলার সাথে জড়িত রয়েছে। আলতাফ ক্রিকেট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঢাকায় ২ বছর খেলাধুলা করেছেন। তিনি ডানহাতি একজন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। এবারের জেলা দলের হয়ে ৪টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৬৭ রান করে। বল হাতেও তিনি অনেক সফল। বল হাতে তার ঝুলিতে জমা পড়েছে ১০টি উইকেট। তার এই ভালো খেলার জন্যে তিনি কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তার মতে, আমরা যে কয়েকদিন অনুশীলন করেছি এবং ম্যাচে অংশ নিয়েছি আমাদের স্যার ও টিম ম্যানেজমেন্টের নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি আরো বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে চাঁদপুরে আসেন ক্রিকেট খেলার জন্যে।
ক্রিকেটার নাহিদ হাসান একজন স্কুল পড়ুয়া ছাত্র। তার বাবা মিলন মাঝি। বাসা ব্যাংক কলোনী। পড়াশোনা করছেন চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে। আউটার স্টেডিয়ামে নিয়মিত ক্রিকেটারদের অনুশীলন দেখে নিজেই ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ডান হাতি এ খেলোয়াড় ৪ মাস ধরে অনুশীলন করছে। বিভাগীয় টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে ব্যাট হাতে করেছেন ৭০ রান ও বল হাতে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। তার মতে, এবারের খেলার অনেক আগ থেকেই কোচের মাধ্যমে তাদের অনুশীলন হয়েছে অনেক ভালো। ধারাবাহিকভাবে খেলা চালিয়ে যেতে চান। দলে মূল একাদশে খেলতে পেরে সে অনেক আনন্দিত।
ক্রিকেটার ফয়েজ আহমেদ হিমেল বসবাস করেন হাজী মহসিন রোডস্থ ছৈয়াল বাড়িতে। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। সে পড়াশোনা করছেন আল-আমিন একাডেমীর দশম শ্রেণীতে। গত ৫ মাস ধরে সে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমীতে অনুশীলন করছেন। রফিকুল বলেন, আউটার স্টেডিয়ামে খেলা অবস্থায় কোচ শামীম ফারুকী স্যার আমাকে খেলার জন্যে পরামর্শ দেন। স্যারের কথা মতো আমি খেলা শুরু করি। এবারের টুর্নামেন্টে স্যার আমাকে যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবেই খেলেছি। ৪ মা্যচে ব্যাট হাতে হিমেল করেছেন ৪০ রান। হিমেল বলেন আমি নিয়মিত খেলতে চাই। এবারের টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে আমরা ভালো মানের কোচিং পেয়েছি।
ক্রিকেটার ফয়সাল মিয়া বসবাস করেন মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। তার বাবা হাসমত আলী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ফয়সাল পড়াশোনা করছেন মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার নিজ বাড়ি মতলবের চরমুকুন্দিয়া এলাকায়। পড়াশোনা করছেন নবম শ্রেণীতে। মতলব ক্রিকেট একাডেমীর মাধ্যমে তার খেলা শুরু হয়। এবারের প্রথম রাউন্ডের ৪ ম্যাচের মধ্যে ১টিতে সে খেলার সুযোগ পেয়েছে। তবে প্রতিটি ম্যাচেই দলের সাথে থেকে খেলা উপভোগ করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি নিয়মিত এবার দলে থেকে অনুশীলন করেছেন।
ক্রিকেটার তোফায়েল আহমেদ বসবাস করেন শহরের জিটি রোড এলাকায়। তার বাবার নাম হাজী আবু জাফর। তোফায়েল পড়াশোনা করেন আল-আমিন একাডেমীর অষ্টম শ্রেণীতে। এই প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টে তার খেলার সুয়োগ হয়েছে। এর আগে কখনো জেলা শহরের বাইরে খেলতে যাননি। প্রথম রাউন্ডের ৪টি ম্যাচেই মূল একাদশে তার খেলার সুযোগ হয়েছে। ওই ম্যাচগুলোতে সে ৩১ রানসহ ৬ উইকেট নেন। সে তার এই খেলার জন্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ক্রিকেট কোচ-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ক্রিকেটার নাজিম উদ্দিনের বাবার নাম আলাউদ্দিন। মেঝো ভাই সজীব উদ্দিনের মাধ্যমে তার ক্রিকেটে আসা। সে পড়াশোনা করছেন আল-আমিন একাডেমীর দশম শ্রেণীতে। গত ৫ মাস ধরে সে ক্রিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন। টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে নিয়মিত অনুশীলন করার কারণে তার খেলাগুলো খুব ভালো হয়েছে। বাম হাতি এ খেলোয়াড় ৪ ম্যাচের মধ্যে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
ক্রিকেটার মুনতাজ ইফতি বসবাস করেন শহরেই। পড়াশোনা করছেন শহরের গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার বাবার নাম ইব্রাহিম মিয়াজী। সেও বাম হাতের একজন খেলোয়াড়। খেলোয়াড় হিসেবে এই প্রথমে জেলা শহরের বাইরে খেলতে গেলেন। ২ ম্যাচে মাঠে নামার সুয়োগ হয়েছে তার। সে যাতে আগামীতে নিয়মিত মূল একাদশে খেলতে পারে সেভাবে এখন থেকে সে নিয়মিত অনুশীলন করে যাবে।
ক্রিকেটার এ কে এম জুবায়ের বসবাস করেন কচুয়া উপজেলায়। তার বাড়ি ওই উপজেলার সুবিদপুর এলাকায়। তার বাবা আনোয়ার হোসেন। পেশায় একজন শিক্ষক। সে পড়াশোনা করছে কচুয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। গত ১ বছর আগে বড় ভাই আলমগীরের মাধ্যমে তার ক্রিকেট জগতে আসা হয়। ডানহাতি এ ক্রিকেটার এবারের মা্যচগুলোতে ভালো খেলাই দর্শকদের দিয়েছেন।
ক্রিকেটার শান্ত সরদার বসবাস করেন পুরাণবাজার এলাকায়। তার বাবা আহসান সরদার। পড়াশোনা করছেন পুরাণবাজার নুরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্লাস সেভেনে এখন পড়াশোনা করছেন। ৫ মাস ধরে তিনি ক্রিকেট খেলছেন। ডানহাতি এ খেলোয়াড় একজন ফাস্ট বোলার। বিভাগীয় টুর্নামেন্টে ১ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
ক্রিকেটার তাহমিদুর রহমান বিভাগীয় পর্যায়ের জেলার একজন ভালো মানের বোলার। তার বাবার নাম মোশারফ হোসেন। এবারই সে প্রথম বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে প্রথম রাউন্ডের সবগুলো খেলাই সে বোলিং করার সুযোগ পেয়েছেন। ৩ ম্যাচে সে ১১টি উইকেট নেন চাঁদপুর জেলার হয়ে।
শাহারাস্তি উপজেলার ছেলে মোঃ জোবায়ের হোসেন। তার বাবা রুহল আমিন ভূঁইয়া। বর্তমানে বসবাস করেন মাদ্রাসা রোড এলাকায়। পড়াশোনা করছেন আল-আমিন একাডেমীতে। হান্টিং প্রোগ্রামে এসে সে এবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন দলে। ডান হাতি এ ব্যাটস্যমান ৪ ম্যাচে করেছেন ৭০ রান। সে নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছেন ক্রিকেট একাডেমীতে।
ক্রিকেটার সাইফুদ্দিন বাবু বসবাস করেন শহরের মাদ্রাসা রোড এলাকায়। তার বাবার নাম হূমায়ন কবির খান। পড়াশোনা করছেন বিষ্ণুদী সিনিয়র মাদ্রাসায়। তারা ৩ ভাই হলেন ক্রিকেটার। ৪ ম্যাচে তিনি মূল একাদশে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ব্যাট হাতে ২৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে দখল করেছেন ৫টি উইকেট।
মতলব দক্ষিণ কলাদী এলাকার খেলোয়াড় ক্রিকেটার মনিরুল ইসলাম আরমান। বাবার নাম আবুল কালাম। পেশায় একজন ঠিকাদার। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও একজন বোলার। মতলব ক্রিকেট একাডেমীর হান্টিং প্রোগ্রামে তার খেলা শুরু হয়েছে। আর এ খেলার মাধ্যমে সে এবার জেলা দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান রাকিবুল হাসান। তার বাবার নাম মোঃ জসিম উদ্দিন। মায়ের নাম আজিজা সুলতানা। সে পড়াশোনা করছেন হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীতে। ফেনী স্টেডিয়ামে প্রথম রাউন্ডের ৪ ম্যাচেই তার ব্যাটে ছিলো রানের পাহাড়।
জেলা ক্রিকেট দলের কোচ শামীম ফারুকী তার এই দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের দলটি অনেক ভালো। সকল খেলোয়াড়দের মাধ্যমে প্রতিভা রয়েছে। এবারের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলো অনেক আস্থা। ওদের যেভাবে খেলতে বলেছি ওরা সেভাবেই খেলেছে। ওরা যদি এই খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে তারা অনেক কিছু করতে পারবে ক্রিকেটে।