প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করায় বিএনপি নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী জ্বালানির আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষায় সরকারের সাশ্রয়ী নীতির বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদের বিদ্রূপাচ্ছলে প্রচলিত প্রবাদ ‘হাতে হারিকেন’ ধরিয়ে দেয়ার প্রতিও ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকার করবে। গতকাল শোকাবহ আগস্টের প্রথমদিনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ এর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকার অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন। কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ’৭৫ এর ১৫ই আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখেছি আমাদের বিএনপি নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে।
তো তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে, তাদের সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। আর দেশের মানুষকে আমরা নিরাপত্তা দেবো এবং দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেই ব্যবস্থা নেবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কথা ছিল প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার আমরা দিয়েছি। আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশই- আমেরিকা হোক, ইংল্যান্ড হোক বা আমাদের প্রতিবেশী ভারত হোক সকলেই এদিকে নজর দিয়েছে।
এ বিষয়টা সবার মাথায় রাখতে হবে। যখন উন্নত দেশগুলো হিমশিম খায় তখন আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে না পড়ি, সাশ্রয়ী হয়েছি। তিনি বলেন, আর সাশ্রয়ী হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এখান থেকে লুটপাট করে খেয়েছি। লুটপাটতো বিএনপিই করে গেছে।
আমরা সেই লুটপাট বন্ধ করে উন্নতি করেছি নইলে কীভাবে মাত্র ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে আজকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা আজকে অর্জন করেছি। তিনি ’৯৬ সালে ২১ বছর পর রাষ্টীয় ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করার এবং পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনে সেটা কমে ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে আসার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যারা এটা করেছে আসলে তারাই লুটপাট করেছে।
আর যারা বাড়াতে পারে তারা লুটপাট করে না বরং প্রতিটি পয়সাকে কাজে লাগানোতেই এই উৎপাদনটা বৃদ্ধি হয়। তিনি করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউত্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মন্দার খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বেই এমনকি অনেক উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে ১ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ছিল সেটা ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, জার্মানিসহ ইউরোপের বহুদেশে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে আমরা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে আমাদের মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগেরও প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে এই আহ্বান জানাবো দেশবাসীর কাছে যেতে হবে এবং আমাদের খাদ্য যে আমরা নিজেরা উৎপাদন করবো সে কথাটা জানাতে হবে। দেশকে গড়ে তোলায় সকলের মাঝে সরকার একটি চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং অতীতের জনংখ্যার ঊর্ধ্বগতির হার কমে আসার নজির সামপ্রতিক গণশুমারিতে পাওয়া নিয়ে সমালোচনারও উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে, কিন্তু হিসাবটা কারো কারো পছন্দ হচ্ছে না। এই হিসাবটা যাদের পছন্দ নয় এবং তারা যদি জনসংখ্যা বাড়িয়েই যেতে চায় তাহলেও দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর সরকার তাদের খাদ্য সংস্থান করবে। কিন্তু আমরা চাই প্রত্যেকটি পরিবার যেন একটি সুখী পরিবার হয় এবং সবাই যেন সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারে, প্রতিটি ছেলে- মেয়ে সুন্দরভাবে লেখাপড়া করতে পারে। বিএনপি’র শাসনামলে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকারটাই ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য হলো একটা মিলিটারি ডিক্টেটর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করেছিল তাদের কাছে এখন নানা রকম নীতির কথা শুনতে হয়। যারা এই বাংলাদেশটাকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদের দেশ।