দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাজারের চেয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তুলনামূলকভাবে চালের দাম বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার সেখানে কেজি প্রতি চালের দাম ১০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি চাল খুলনা অথবা নওয়াপাড়ায় আনতে ৬৫ টাকা খরচ হবে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা দরে। সরকার অনুমতি দিলেও লোকসানের ভয়ে বৃহত্তর খুলনার আমদানিকারকরা ভারত থেকে চাল আনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর আগে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে খুলনা ও সাতক্ষীরার ২৫ আমদানিকারককে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ৭৪ হাজার টন চাল আনার অনুমতি পান বৃহত্তর খুলনার ২৫ আমদানিকারক। খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় ১১ই আগস্ট ও দ্বিতীয় দফায় ১৭ই আগস্টের মধ্যে আমদানির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা জাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। রাজলক্ষ্মী এন্টার প্রাইজের কর্ণধার গোপাল সাহা বলেন, ১ হাজার টন চাল আমদানির জন্য অনুমতি পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু আমদানিতে আগ্রহ কম দেখানোর কথা বলে তিনি জানান, ডলারের মূল্য বেড়েছে। তাছাড়া ভারতে চালের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি চালে ট্যাক্স দিতে হয়। খুলনার বাজার পর্যন্ত ভালো মানের সরু মিনিকেট চাল আনতে ৬৫ টাকার উপরে খরচ পড়বে। স্থায়ী বাজারে এর থেকে আরও বেশি দরে বিক্রি হবে। যা আমাদের স্থানীয় বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি আরও জানান, গেল বার অনুমতি পাওয়া প্রতি টনের মূল্য ছিল মোটা চাল ৩৬০ ডলার ও চিকন ৪২৫ ডলার।
এবার তা বেড়ে ৪৯০ ডলারে পৌঁছেছে। তাই লস করে তার প্রতিষ্ঠান চাল আমদানি করবে না। অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকার চাল আমদানির ঘোষণা না দিলে চালের বাজার আরও বেড়ে যেতো। তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে এলসির চাল আনতে ২০ দিন সময় বেশি লাগে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান ও কালনা থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত পরিবহনের সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। কিন্তু যানজটের কারণে বাংলাদেশ পর্যন্ত চাল আসতে এ সময় লাগে। ভারতের পেট্রাপোল দিয়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক বিভিন্ন মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এ ট্রাকের মালামাল আনলোড করতে সময় লাগে। এবার সব ট্যাক্স ও পরিবহন খরচসহ চাল আনতে তার অনেক লস হবে। এই ভেবে তিনিও চাল আমদানি করবেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। কাজী সোবহান ট্রেডিং করপোরেশনের কর্ণধার সুজন কাজী বলেন, গেল বছরে ডলারের দাম ছিল ৮৬.৭৫ টাকা। বর্তমানে ৯ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে ডলারের দাম। ডলারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। ডলারের দাম ও চালের মূল্য না কমলে তিনি চাল আমদানি করবেন না।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান আমদানির ক্ষেত্রে নির্দেশনাপত্রে প্রথম দফায় ২১শে জুলাই ও দ্বিতীয় দফায় ২৫ই জুলাইয়ের মধ্যে এলসি খোলার এবং আমদানিকৃত বস্তায় চাল বিক্রির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রথম দফায় ১১ই আগস্টের মধ্যে এবং দ্বিতীয় দফায় ১৭ই আগস্টের মধ্যে সকল চাল বাজারজাতকরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চাল আনার অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান রাজলক্ষ্মী এন্টারপ্রাইজের মালিক গোপাল সাহা তথ্য দিয়েছেন, ভারতের বর্ধমানে গত বছর প্রতি টন মোটা চালের মূল্য ছিল ৩৬০ ডলার এবং চিকন ৪২৫ ডলার। এবারে আমদানির অনুমতি পাওয়া চালের প্রতি টনের মূল্য ৪৯০ ডলার। সড়ক পথে যানজটের কারণে বর্ধমান থেকে নওয়াপাড়া অথবা খুলনায় আসতে চাল বোঝাই ট্রাকে ১ মাস ১০ দিন সময় লাগে। প্রতিদিন গড়ে ২শ’ গাড়ি পাথর, গমের ভুসি, মসুরের ডাল, পিয়াজ, খেজুর, টমেটো, আঙ্গুর ও বেদানা বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। ফলে যানজট লেগেই আছে। বর্ধমান থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি মিনিকেট চাল আনতে ৬৫ টাকা খরচ পড়ে। তিনি আরও তথ্য দিয়েছেন, স্থানীয় বাজারে ৬২ টাকা দরে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় আমদানিকারকরা চাল আনতে সাহস পাচ্ছে না। তিনি ১ হাজার টন চাল আনার অনুমতি পেয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে। গত বছর ২ হাজার টনের অনুমতি পেয়ে ৮শ’ টন আমদানি করেন।