শওকত আলী
চাঁদপুরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে কৃষিঋণ প্রদানের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে ওই শাখার কর্মকর্তাসহ একটি জালিয়াত চক্র জড়িত বলে জানা গেছে। এ নিয়ে চাঁদপুরে ব্যাংকিং সেক্টরে বেশ তোলপাড় চলছে।
২০১৩ সালে জনতা ব্যাংক ষোলঘর কো-অপারেটিভ শাখার অধীনে চাঁদপুর শহরের গুণরাজদী, বিষ্ণুদী ও তরপুরচন্ডী এলাকার সহস্রাধিক ব্যক্তিকে ব্যাংকের আন্তঃডেবিট ভাউচারের মাধ্যমে কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়। গ্রাহকদের ৫০ হাজার, ৪০ হাজার, আবার কাউকে ৩৫ হাজার টাকা করে ওই ঋণ প্রদান করা হয়। পরবর্তী সময়ে ঋণ আদায়ের জন্য ওই শাখায় বদলি হয়ে আসা নতুন কর্মকর্তারা ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তির খোঁজে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গেলে এ ভুয়া ঋণের বিষয়টি ধরা পড়ে। দেখা যায়, ঋণ প্রদানের সময় যেসব কাগজপত্র বিশেষ করে জমির খতিয়ান, ভোটার আইডি, জন্ম নিবন্ধন, ছবি ইত্যাদি জমা দিতে হয় তা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এসব কাগজপত্র তৈরি করে এ ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভোটার আইডি ও কাগজপত্রে একজনের স্থলে অন্যের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। যাদের ছবি লাগিয়ে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এ ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে দিনমজুর কিংবা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। এদের কয়েকজন হচ্ছেন আনোয়ার হোসেন (রিকশা চালক), অহিদ (হোটেল কর্মচারী), আবুল হোসেন শেখ (চায়ের দোকানদার), আ. করিম (রিকশা চালক) ও মফিজ উদ্দিন (অব. সহকারী শিক্ষক)।
আনোয়ার হোসেন নামে এক রিকশা চালকের ছবি লাগিয়ে শাহিন পেদা নামে ভুয়া ঋণ গ্রহীতার বিষয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যোগাযোগ করার পর কয়েক দিনের মধ্যে অলি উল্লা নামে ওই শাখা থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা জমা দেন বলে জানা গেছে। যেখানে ঋণ গ্রহণকারীর কাগজপত্র সবই ভুয়া সেখানে ওই কর্মকর্তা কেনইবা এ টাকা জমা করলেন? অবাক করার বিষয় হচ্ছে, গুণরাজদী মৌজায় ভোটার হচ্ছে ৮০০। অথচ ঋণ দেয়া হয়েছে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে। তাহলে কি প্রত্যেক ভোটার আইডিধারী ঋণ পেয়েছেন? ২০০ ব্যক্তি কিভাবে ওই এলাকার ভোটার আইডিধারী হলেন?
গুণরাজদীতে ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ আদায় করতে গিয়ে ১৪৪ জন গ্রাহকের নাম ঠিকানা কিছুই খুঁজে পাননি। যাদের ছবি দেয়া হয়েছে সে ছবির সঙ্গে ঋণ গ্রহীতা ব্যক্তির নামের মিল কিংবা ভোটার আইডির বিন্দুমাত্র মিল নেই। এভাবে তরপুরচন্ডী ও বিষ্ণুদী এলাকায়ও অসংখ্য ব্যক্তির নামে অন্যের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হলেও কত টাকা প্রদান করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য ওই শাখার কেউ সুনির্দিষ্টভাবে দিতে পারেনি। তবে একটি সূত্রে জানা যায়, এভাবে ভুয়া ঋণ প্রদানের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার উপরে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে গরিব অসহায় ভূমিহীন বেশ ক’জন (যাদের ছবি ব্যবহার করে ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে) ব্যাংকের ওই শাখায় নিজেদের সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ দাবি করে ঋণের দায় থেকে রেহাই পেতে আবেদন জানিয়েছেন।
জনতা ব্যাংক ষোলঘর শাখায় ওই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার আ. রব পাটওয়ারী অবসরে গিয়ে বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। তার ব্যক্তিগত নাম্বারে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে ওই শাখার বর্তমান ম্যানেজার মিসেস সুফিয়া বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, আমি এই শাখায় নতুন এসেছি, কাগজপত্র দেখছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
জনতা ব্যাংকের এরিয়া প্রধান (ডিজিএম) খালেদ মো. ইকবাল হোসেন জানান, ঋণ গ্রহণকারী ভুয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছি। ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজারসহ অন্যরা জড়িত থাকলে কেউ এ দায় থেকে ছাড় পাবে না। বিধি অনুযায়ী অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। এ ঘটনা নিয়ে পুরো চাঁদপুর শহরে ও ব্যাংক পাড়ায় তোলপাড় চলছে।