প্রতিনিধি
একসময় খালে ও নদীতে মাছ ধরতেন। পরিবারের লোকজনের সাথে ছোটকাল থেকে এই কাজ করতেন। এলাকায় অবসর সময়ে বিভিন্ন ঔষধের দোকানে বসতেন। আর দোকানে বসা অবস্থায় দোকানদারদের বেচাকেনা দেখে শখ জাগে ডাক্তার হওয়ার। নিজেকে এলাকায় ডাক্তার হিসেবে চিনবে। তার কাছে রোগী আসবে, এই জন্য কয়েক মাসের ছোটখাটো ট্রেনিংও নিয়েছেন। স্বল্প সময়ে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেবে বলে নিজের এলাকায় দোকানও দিয়েছিলেন। বর্তমানে দোকানটি বন্ধ রয়েছে। আর এই বন্ধ দোকানের মালিক ছিলেন চাঁদপুর সদরের মহামায়া এলাকার ভুয়া চিকিৎসক লিটন সরকার। তার বাবার নাম বাসু সরকার। এক সময় গ্রামে বসবাস করলেও বর্তমানে শহরের ঘোষপাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন।
রোগীদের কাছে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়দানকারী সেই ভুয়া ডাক্তার বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের আদালতে ছিলো ওই চিকিৎসকের রিমান্ড শুনানি। তার আইনজীবী আদালতের কাছে তার জন্য জামিনও চেয়েছিলেন। আদালত একই সাথে রিমান্ড ও জামিন না মঞ্জুর করেন। ওই দিন দুপুরেই সরজমিনে তার নিজ এলাকা মহামায়া এলাকায় তার সম্বন্ধে জানতে গেলে তাদের আশে-পাশের বাড়ির লোকজনই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এগিয়ে আসে। গ্রামবাসী কথা বলার আগেই সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন পত্রিকায় তাদের যেনো নাম প্রকাশ না করা হয়। তারা বলেন, সাইনবোর্ড টানিয়ে ও লিফলেটের মাধ্যমে অর্শ্ব এবং পাইলসের বিভিন্ন রোগীরা তার কাছে আসতেন সেবা নেয়ার জন্য। লিটন সরকারকে বিভিন্ন সময় রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ ও ধমকানোর কাজসহ টাকার দরদামে সহযোগিতা করতেন চরবাকিলার লিটু ও পাটওয়ারী বাড়ির সেলিম। এই দুজন অনেক সময় তার দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। ওই দুই দেহ রক্ষীর মাধ্যমেই রোগীদের সব কিছু সমাধানের আশ্বাস দেয়া হতো বলে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে লিটন সরকারকে ওই এলাকার যুবকরা তার নামও দিয়েছে। ছোট থেকে বড় সকল ধরনের মানুষ তাকে ‘মলকাটা’ ডাক্তার হিসেবে চেনে। জেলা শহর ও জেলার বাইরে থেকে আসা রোগীদের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন তিনি একজন এমবিবিএস ডাক্তার বলে। স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে আরো জানা গেছে তিনি নিজেই অপারেশনের কাজ করতেন। অনেক সময় জেলা শহর থেকে হাতে গোনা ক’জন ডাক্তার তার সাথে অপারেশনের কাজে সহযোগিতা করতেন। জেলা শহরের ডাক্তারদের নেতা হিসেবে পরিচিত এমন একজন লিটন সরকারের জটিল রোগীদের অপারেশনে সরাসরি অংশ নিতেন। চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের মাসুদ মালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে আটক করে। পুলিশের সাথেও তার ছিলো অনেক সখ্যতা। চাদসী ক্ষত চিকিৎসালয়ের চিকিৎসককে আটকের পর পুলিশ তাকে হ্যান্ডকাপ না পরিয়ে ডিউটিরত অফিসারদের রুমে বসতে দেয়। সেখানে বসেই পুলিশের সামনে লিটন সরকারকে দেখা যায়, নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে জোরে জোরে ফোনে কথা বলছে। সাংবাদিকরা তার কাছে কিছু জানতে চাইলে বলতে থাকেন দেখেন না আমি নেতাদের সাথে ফোনে কথা বলছি। আর আমার নিজের লোকও পত্রিকার সাথে জড়িত রয়েছে। সে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে। মোবাইল ফোনের বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ জানতে পেরে ডিউটিরত পুলিশ কর্মকতাকে ডেকে নেয় এবং লিটনের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়। প্রথমে তাকে আটকের কথা শুনে বর্তমান শাসক দলের উচ্চ পর্যায়ের দু একজন নেতা তাকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য তদবির করেন। স্থানীয় পত্রিকার কয়েকজন সংবাদকর্মী মডেল থানায় আটকের বিষয়টি অফিসার ইনর্চাজকে জিজ্ঞাসা করার পর এবং তাকে কেনো ছেড়ে দেয়া হবে এ প্রশ্নের পরই পুলিশের কাছে তদবিরকারীদের তৎপরতা কমে যায়। এর পরের দিনই তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে।