কচুয়া প্রতিনিধি ঃ
পিএসসির ভূয়া পরীক্ষার্থীর প্রনেতা জালিয়ত প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে এতবড় জালিয়াতির জলন্ত প্রমানের পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় শিক্ষক,অভিভাবক ও অভিজ্ঞমহলের মাঝে প্রশাসনকে নিয়ে নানান প্রশ্নের দানা বেধেছে। সকলের প্রশ্ন জালিয়াত মজিব মাষ্টারের শাস্তি হবে কি ? না সে পার পেয়ে যাবে।
চাঁদপুরের কচুয়ায় চলতি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) ২০১৫ পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক মাষ্টার জালিয়াতি করে প্রবেশ পত্রে প্রকৃত পরীক্ষার্থী তানবীর হাসানের ছবিরস্থলে নাহিদ নামের এক ভূয়া পরীক্ষার্থীর ছবি লাগিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেন। যার পরীক্ষার রোল নং-১০৮০,আইডি নং-১১২০১৫৪০৭০২০১০৮০। যার ভূয়া পরীক্ষার্থীর পিতার নাম- জামাল হোসেন, মাতার নাম- নয়ন বেগম, গ্রাম-পদুয়া, উপজেলা-কচুয়া,জেলা-চাঁদপুর। প্রকৃত পরীক্ষার্থীর নাম- তানবীর হাসান, পিতার নাম-ফয়েজ উল্যাহ, মাতার নাম-কুহিনুর বেগম, গ্রাম-হরিপুর, উপজেলা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর।
মজিব মাষ্টার ভূয়া পরীক্ষার্থীর মা নয়ন বেগমকে বলেন, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না,সব কিছু আমার কাছে, এখন পরীক্ষা দেয়ার দরকার পরীক্ষা দেউক। পরীক্ষার ফলাফলের পর কচুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে খালি সনদ স্কুলে পাঠায়, এবারও পাঠাবে তখন সনদ পত্রে তানবীর হাসানের নামের স্থানে আপনার ছেলের নাম লিখে দিব। এ নিয়ে কোন টেনশন করবেন না। তাছাড়া শিক্ষা অফিসারদের সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক আছে। কথাগুলো বলেছেন কচুয়া উপজেলার ১৯নং হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জালিয়াতীর প্রনেতা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক।
বিবরনে জানাযায়,কচুয়া উপজেলার হরিপুর গ্রামের ফয়েজ উল্যাহর ছেলে তানবীর হাসান ১৯ নং হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর নিয়মিত ছাত্র ছিল । যার ক্লাস রোল নং- ৩৯। ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থী হিসেবে সহকারী শিক্ষক ঈমাম হোসেন ছাত্র-ছাত্রীদের বিবরনী তালিকা প্রস্তুত করেন এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক যাচাই করে স্বাক্ষর করেন। যার কচুয়া উপজেলায় পরীক্ষার্থীর নং- ১০৮০, তারিখ- ১৭/০৫/২০১৫।
ফয়েজ উল্যাহ তার ছেলে তানবীর হাসানকে স্কুলে না পড়িয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার গাউছিয়া সুন্নিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানায় মক্তব বিভাগে ভর্তি করেন। যার ক্রমিক নং-৩৯। তানবীর হাসান ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিবেনা জানতে পেরে হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক অর্থের বিনিময়ে উপজেলার পদুয়া গ্রামের জামাল হোসেন এর ছেলে নাহিদকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সনদ দিবে মর্মে চুক্তি করেন এবং সে মোতাবেক পরীক্ষার প্রবেশ পত্রে তানবীর হাসানের ছবির পরিবর্তে নাহিদের ছবি লাগিয়ে পরীক্ষা নেয়া শুরু করেন। ২৪/১১/২০১৫ ইং তারিখে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পরীক্ষা চলাকালীন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাছিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ভূয়া পরীক্ষার্থী নাহিদের তথ্য নেন ও তার ছবি ধারন করেন সাংবাদিক। এ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সপেক্টর তারেক নাথ মল্লিক, হল সুপার সাচার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম ও পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শকরা উপস্থিত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক মাষ্টার জালিয়াতি করে নাহিদ নামের এ ভূয়া পরীক্ষার্থী বানিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন জানতে পেরেও কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা ভূয়া ছাত্র নাহিদকে বহিস্কার না করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেন। মজিবুল হক মাষ্টারের জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ভূয়া পরীক্ষার্থী নাহিদকে কেন্দ্রে না আসার পরামর্শ দেন। এবং পরের দিন তাকে অনউপস্থিত দেখিয়ে জালিয়াত মজিব মাষ্টার নিজেকে আপাতত দায়মুক্ত করেন। এদিকে সাময়িক দায়মুক্ত হলেও সাংবাদিকরা বসে না থেকে পুরো জালিয়াতির বিষয়টি উৎঘাটন করার লক্ষে সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রকৃত পরীক্ষার্থী তানবীর হাসান কে খুঁজে বের করেন নারায়নগঞ্জ জেলার গলাচিপা গাউছিয়া সুন্নিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানায় গিয়ে। সে ঐ মাদ্রাসার মক্তব বিভাগের ছাত্র । যার ক্রমিক নং-৩৯। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিনা তা জানেনা শিশু তানবীর হাসান। অথচ কাগজ কলমে সে পরীক্ষা দিচ্ছে মাঝিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। পরীক্ষার প্রবেশ পত্রে তানবীর হাসানের ছবির পরিবর্তে নাহিদ এর ছবি লাগিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে তাও সে জানেনা। শুধু তানবীর হাসান নয় তার বাবা ফয়েজ উল্যাহ,মাতা কুহিনুর বেগমও জানেনা।
ভূয়া পরীক্ষার্থী নাহিদের মা নয়ন বেগম জানান, আমাদের কোন দোষ নাই, মজিবুল হক মাষ্টার বলেছেন, তানবীর হাসান নামের একজন ছাত্র পরীক্ষার্থী দিবেনা ঐ পরীক্ষার্থীর নাম ঠিকানা সবই ঠিক থাকবে শুধূমাত্র ছবিটি পরিবর্তন করে নাহিদের ছবি লাগিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিবেন এবং পরীক্ষার পর যখন ফলাফল দিবে তখন উপজেলা থেকে খালি সনদ দিবে তখন তানবীর হাসানের পরিবর্তে নাহিদের নাম ঠিকানা লিখে সনদ দিবেন। সে জন্য মজিব মাষ্টার কিছু টাকা দাবী করেন । নাহিদের মা মজিবুল হক মাষ্টারের প্রলোভনে পরে নাহিদের ছবি দেন। প্রবেশ পত্রে তানবীর হাসানের ছবি না লাগিয়ে নাহিদ এর ছবি লাগিয়ে পরীক্ষা নেয়া শুরু করেন।
তানবীর হাসানের বাবা ফয়েজ উল্যাহ জানান, একজন শিক্ষক হয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে এতোবড় জালিয়াতি করেছে তা মেনে নেয়া যায়না। তিনি জালিয়াত শিক্ষক এর শাস্তি দাবী করেন। একজন শিক্ষকের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের বদনাম নিতে চায়না শিক্ষক সমাজ তারা এ জালিয়াত শিক্ষকের শাস্তির দাবী জানান। হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অভিভাবক ও অভিজ্ঞমহল মজিবুল হক মাষ্টারের শাস্তির দাবী জানান।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন,বিষয়টি খুবই জগন্ন অপরাধ। দায়ী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। কচুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেছেন এ বিষয়টি আমি জেনেছি জেনে উপজেলা নির্বাহী স্যারকে জানিয়েছি নির্বাহী স্যার তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা নিবে। সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনির হোসেন বলেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জালিয়াতি করে শিক্ষক দূর্দান্ত সাহস করেছে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্তা নেয়া হবে।