ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভয়াবহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৬৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উজানের এই বৃষ্টির পানি পাহাড়ি ঢল হয়ে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সুনামগঞ্জের ৫ টি উপজেলার শহর, গ্রাম, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নিমজ্জিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলা শহরসহ প্রতিটি পাড়া মহল্লার প্রায় ৯০ ভাগ বাসাবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। নিমজ্জিত হওয়ায় ১০৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার, ছাতক পয়েন্টে ২২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই পয়েন্টের মধ্যে ছাতকে গত ২৪ ঘন্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি ও সদরে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি হুহু করে বাড়ছে। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর শহরের প্রায় ৯০ ভাগ বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর শহরের গাড়ির সড়কে এখন নৌকায় যাতায়াত করছেন মানুষজন। জেলার ৫ টি হাসপাতাল নিমজ্জিত হওয়ায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. শামসুদ্দোহা বলেন, চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ভয়াবহ বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি সীমান্ত নদী নালা ও ছড়া দিয়ে সুনামগঞ্জে দ্রুত নেমে এসেছে। এ কারণে দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে পানি আরো বাড়বে এবং এই এলাকায় বিপর্যয় ডেকে আনবে। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানিতেই এখন এই এলাকা ডুবছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, বাপাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে সুরমা নদীর পানি আরো বাড়বে, তাই আগামী ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, আমার পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। ৯০ ভাগ বাসাবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো বানভাসীদের ত্রাণ সহায়তা দিতে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক, দোয়ারা-ছাতক সড়ক, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়ক, বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বহু রাস্তাঘাট ও সেতু ঢলের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যা বিলম্বিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বড়ো ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান বলেন, ছাতকের ১৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ২৫৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় আমরা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছি। সদর, দোয়ারা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরে আরো শতাধিক স্কুল নিমজ্জিত হওয়ার খবর পেয়েছি। এসব উপজেলার স্কুল আসার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্কুলের সঙ্গে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের ১০৩ টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্টান প্লাবিত হওয়ায় সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। আরো বহু স্কুলও নিমজ্জিত হওয়ার পথে। এতে অবকাঠামাগত ক্ষতিও হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, বন্যায় ৮৫০ হেক্টর আউশ ধান ও ১২০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এর আগের বন্যায়ও আউশ, বাদাম ও সব্জি নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, ছাতক উপজেলা হাসপাতাল, কৈতক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, দোয়ারা বাজার ও তাহিরপুর উপজেলা হাসপাতাল প্লাবিত হয়ে সেবা বিগ্নিত হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তাঘাট ডুবে থাকার কারণে রোগিরাও এখন চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তবে জরুরি অবস্থার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জসহ ৬টি উপজেলার সরকারি বেসরকারি অনেক স্থাপনা নিমজ্জিত হয়েছে। ৩০ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৬০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বানভাসী মানুষদের সহায়তায় নগদ ৯ লাখ টাকা ও ৩২০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া এক জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটকবাহী সকল নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন।