মানুষের জীবনটাই নাটক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কেউ স্বীয়ভাবে নায়ক আবার কেউ খলনায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। আমার গাঁ চাঁদপুর জেলার মনোহরখাদীতে। গাঁটি মেঘনার কূল ঘেঁষে হিন্দু- মুসলমান একই সাথে বসতি। হিন্দু- মুসলমান উভয়ের মধ্যে ছিল সু-সম্পর্ক। প্রতিবছর হিন্দু-মুসলমান মিলে কানুদী মিয়ার বাজারে আয়োজন করত নাটকের।উক্ত নাটকে যারা অভিনয় করতেন তারা কলমি শিক্ষায় পারদর্শী ছিলেন না। তবে মুখ চালাতে বেশ পটু। এদের মাঝে কয়েকজনের অভিনয় আমার কাছে ভালো লাগত। বিশেষ করে মনা মেম্বারের অভিনয় যার অট্টহাসিতে কেঁপে উঠত সমস্ত পাড়া গাঁ। ভালো লাগত বেটা দুদু মিজির অভিনয়। মুসলমান বেটা অভিনয়ে সাজত হিন্দু যেন কানাই শীল। নাটকের শুরম্ন দুদু মিজির বয়ান দিয়ে আদেশ করম্নন জাহাপনা।দুদু মিজির প্রস্থানের পর। দর্শকদের আবেদন এবার নাচ হবে। সাথে সাথে ঘোষনা এবার নৃত্য পরিবেশন করবেন ডানাকাটা পরী মিস ডায়না। ডায়না তার ছদ্মনাম আসল নাম তার আলতা বানু। গাঁয়ের মানুষ ডায়নার নৃত্য দেখার জন্য হুমরি দিয়ে পান্ডেলের সামনে যেয়ে পড়তেন ।নাট্যকাররা যেসব বই করতেন এর মাঝে বিমাতার চক্রান্ত বইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নাটক দেখতে বাড়ির বউ-ঝিরা আসত তাদের জন্য আলাদা বসার ব্যব্স্থা ছিল। নাটকে আমার বাড়ির লোকও অভিনয় করতেন। নাটকে তার ছন্দ নাম ছিল জঙ্গল খাঁ। নাটকের আরেকটি দৃশ্য আমার কাছে ভালো লাগত তা হল বিভিন্ন পন্যের বিপনি দিয়ে সাজানো হতো নাটকের চারপাশ ।সারারাত ব্যাপী অনুষ্ঠান। অর্থের জোরও কম তাই মাঝে মাঝে পান্ডেল হতে বের হয়ে ভূট ভাজা খেতাম। আর একটি খাবারের কথা না উল্লেখ্য করলে মনে হয় জীবনের স্মৃতি বলা থেকে একধাপ পিছিয়ে যাব। গোলআলু সিদ্ধ করে লবন, মরিচ, হলুদ মিশ্রত করে তেলে ভেজে ক্রেতার মুখে তুলে দেওয়া হত্। বিক্রি হত চার টুকরা এক টাকা। খেজুর গাছের কাঁটা নরম আলুর বুকে বিধিয়ে মুখে তুলে দিতাম। এসব স্মৃতি মনে করে সত্যি দু:খ পাই। যারা নাটকে অভিনয় করতেন তারাও বেচেঁ নাই। বেচেঁ আছে তাদের রেখে যাওয়া হাজারও স্মৃতি ।তাদের স্মৃতিকে পুঁজি করে আমার এ গাথুঁনি।
লেখক:
এম.এইচ.মাহিন ।