মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের দক্ষিণ গাজীপুর গ্রামে ভূমিহীনদের আবাসনের জন্যে সরকারের নির্মাণ করা গাজীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বা কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিজন থেকে ঘর বরাদ্দের জন্যে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ঘর বরাদ্দ না দেয়ার নির্দেশসহ ঘর তালাবদ্ধ করে চাবি নিজ হেফাজতে রাখেন। ইতোমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ২২ জনকে চাবি হস্তান্তর করেন। বাকি ৩৮টি চাবি ইউএনও কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী ক’জন ব্যক্তি দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬০টি কক্ষের বরাদ্দের জন্যে অর্থবাণিজ্য করেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে। শুধু তাই নয়, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকেও কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে ঘর দেয়ার নামে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী দক্ষিণ গাজীপুর গ্রামের কালু বেপারীর মেয়ে ময়না আক্তার, বাতেনের স্ত্রী বেগম, গোলাম মোস্তফার স্ত্রী লায়লা বেগম, মোজাম্মেল হকের ছেলে কামরুল ইসলাম, চাঁন মিয়ার স্ত্রী রানু বেগম, নজরুলের ছেলে জুয়েল জানান, গাজীপুর গ্রামের খাজা মিয়া, মানসুর মোল্লা, সাবেক ইউপি সদস্য পারভীন, সুমনসহ ক’জন আমাদের কাছ থেকে ঘর বরাদ্দের জন্যে ১৫ হাজার টাকা করে নেন। টাকা না দিলে ঘর বরাদ্দ দেয়া যাবে না, তাই ঋণ করে এ টাকা জোগাড় করে তাদের দেই।
এলাকাবাসী জানায়, মতলব উত্তর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও এ আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন-এমনও অভিযোগ রয়েছে। ভূমিহীনদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ হয় এলাকাবাসীও। গৃহহীনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। উপজেলা যুবলীগ নেতা রেজোয়ান খন্দকার, ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এমএ কুদ্দুস, ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক মোল্লা বলেন, দেশের সকল ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এর অংশ হিসেবে চলমান আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে সরকার নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে গাজীপুরে ৬০টি গৃহহীনের জন্যে ব্যারাক নির্মিত হয়েছে। প্রকৃত গৃহহীনরাই এ ঘর বরাদ্দ পাবে। স্থানীয় ক’জন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যে গৃহহীনদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে, যা ঠিক হয়নি। যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত
ফতেপুর পশ্চিম ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, স্থানীয় কিছু লোক গৃহহীনদের ঘর দেয়ার নামে টাকা নিয়েছে। তা উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ দেয়ার জন্যে স্থানীয় গৃহহীনদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছে। আবেদন করার পূর্বেই এলাকার ক’জন টাউট শ্রেণীর লোক গৃহহীনদের মাঝে ঘর দেয়ার নামে অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠে। সাথে সাথে উপজেলা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে ঘরের চাবি নিজ হেফাজতে নিয়ে নেয়।
আবেদনপ্রাপ্তির পর উপজেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, গাজীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ দেয়ার আগেই স্থানীয় লোকজন কয়েকটি পরিবারকে ঘর বরাদ্দের আশ্বাস দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এ অভিযোগ পাওয়ার পর সরজমিন তদন্তে অর্থ নেয়ার বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাই। গৃহহীনদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই পূর্বক প্রকৃত গৃহহীনদের গৃহ বরাদ্দ দেয়া হবে।