অনলাইন ডেস্ক=
নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দিন এসব পদত্যাগপত্র কার্যকর ধরা হবে। ওই দিনই গঠন করা হবে সর্বদলীয় সরকার। নতুন সরকারে বর্তমান সরকারের কোন কোন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকবেন, তা আগামী ২০ নভেম্বরের পরে জানা যাবে বলে গতকাল সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে জানানো হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীদের এসব কথা জানান। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক থেকে বের হয়ে একাধিক মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের সম্ভাব্য আকার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রস্তাবিত সরকারে না এলে করণীয় কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা করেন। এ ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কৌশল, বিরোধী দলের হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিও বৈঠকে পর্যালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের আন্দোলন সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তাদের জন্য সর্বদলীয় সরকারের দরজা সব সময়ই খোলা থাকবে। বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিলে সরকারের আকার বড় হবে। আর বিরোধী দল না এলে সর্বদলীয় সরকারের আকার ছোট হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিরোধী দল যেসব মন্ত্রণালয় চায় তাই দেওয়া হবে। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে বর্তমান মহাজোট সরকারের অংশীদার যাঁরা রয়েছেন তাঁরা যোগ দেবেন। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননসহ অন্যরা সেই সরকারে যোগ দেবেন।
এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের হরতাল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্দোলন মোকাবিলার জন্য কিছু এলাকায় দলের নেতাদের না থাকার প্রসঙ্গও ওঠে। কথা উঠেছে, অনেক অঞ্চলের জেলা পর্যায়ের নেতারা সেখানে অবস্থান না করে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। এলাকায় থেকে সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি না নিলে পিছিয়ে পড়তে হবে। নির্বাচন যারা বয়কট করবে, তারা নানা ধরনের হুমকি দেবে। এসব হুমকি-ধমকি আমলে না নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
বৈঠকের পর একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথায় মনে হয়েছে সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে। আসলে সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে না। কারণ মহাজোট সরকারের যেসব মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে থাকবেন, তাঁদের পদত্যাগের দরকার হবে না। বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব সৌভাগ্যবান মন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেবেন, তাঁদের দপ্তর বদল হতে পারে অথবা বর্তমানে তিনি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন, সেই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরো কিছু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যোগ হতে পারে।’ তিনি বলেন, পদত্যাগ করে নতুন সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বারবার বিরোধী দল বিএনপিকে সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানালেও তারা নির্বাচনকালীন নতুন সরকারে যোগ না দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় কার্যালয়ে এ রকম কথা বলেন। আগের দিন রবিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে বিএনপিকে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এমনকি বিরোধী দল কোন কোন মন্ত্রণালয় চায়, সেটা নিয়ে আলোচনারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর আগে গত ১৮ আক্টোবর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা দেন। পাল্টা রূপরেখা দেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াও। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার জন্য টেলিফোন করেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘ ৩৭ মিনিট কথা হলেও কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হওয়ায় গোটা জাতির মাঝে হতাশা নেমে আসে।
এদিকে গত মাসেই সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অধিবেশন শেষ না করে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সংসদের এই অধিবেশন আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন একজন মন্ত্রী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে হলে সংসদের অধিবেশন দরকার হবে। এ জন্যই সংসদকে টেনে নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে একজন মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে হচ্ছে। অনেক এমপি মনোনয়ন পাবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। মনোনয়ন না পাওয়ার দলে কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীও থাকতে পারেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এ অবস্থায় যাঁরা মনোনয়ন পাবেন না, তাঁরা কেন রাজপথে বিরোধী দলের আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে যাবেন? এটাই বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। মন্ত্রিসভার এ সদস্য আরো জানিয়েছেন, বৈঠকের পর মন্ত্রীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। সবাই চাচ্ছে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিতে। যদিও সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীরা সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। তার পরও মন্ত্রীর মর্যাদা কেউ হারাতে চান না।
এদিকে অনেকের মতে, সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হলেও সেই নতুন সরকার থেকে বাদ পড়ছেন বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া। কারণ নতুন সরকার গঠন করা হবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে। বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয়ে আছেন। তাই সর্বদলীয় সরকারে তাঁর থাকার কোনো সুযোগ নেই। এদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি জাসদের সভাপতি হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।