মানুষ যেন ভোট দেয় সে পরিবেশ তৈরি করুন
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ।। মানুষ ওষুধ চিকিৎসা পান কিনা, একটু দেখবেন ।। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে ।। মশা মেরে শেষ করা যাবে না, সচেতন হতে হবে
স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যাবেন। মানুষ যেন ভোট দেয়, সে পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা চাই, আজ যে দীর্ঘদিনের উন্নয়নের ফসল, এটা যেন অব্যাহত থাকে; কেউ যেন পিছিয়ে দিতে না পারে। একই সঙ্গে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ যেন মাথাচাড়া না দেয়, সে বিষয়েও সবাইকে সচেতন করতে হবে।
গতকাল দুপুরে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পেয়ারুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. হারুন-অর রশীদ হাওলাদার, মিউনিসিপ্যাল এঅ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ম্যাব) সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, রংপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীসহ ২৭ জন বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম।
এবারই প্রথমবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস। এ উপলক্ষে গতকাল বেলা ১১টায় গণভবনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ প্রায় আট হাজার জনপ্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
গণভবনে উপস্থিত জনপ্রতিনিধির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনাদের উপস্থিতিতে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, আপনাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমরা আরও উজ্জ্বল করে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াব। দেশে স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারা ছিল বলেই গ্রামপর্যন্ত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আবারও সুযোগ পেলে প্রতিটি গ্রামকে শহরের মতো গড়ে তোলা হবে। আমি জানি, এখনও অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবারও যদি জনগণের সেবা করার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দিব। কারণ, প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে উঠবে।
জনপ্রতিনিধিদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারি ব্যবহার করতে হবে। আশপাশের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা মেরে শেষ করা যাবে না। নিজেরাও সচেতন হতে হবে। এজন্য বাড়ির চারপাশ যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাই নয়, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। তাতে আপনারাই লাভবান হবেন। আমিও লাভবান হয়েছি। আমার মা-বাবার যে জমি ছিল, তার কিছু অংশ চাষ করেছিলাম। খরচ বাদেও ২ লাখ ২৭ হাজার আয় হয়েছে। ২৭ হাজার টাকা সবাইকে বিলিয়ে দিয়েছি। কাজেই নিজেরা ফসল ফলাব, নিজেরা খাব; কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আমি অনুরোধ করব, আপনারা নিজেদের জমি চাষ করুন, গাছ লাগান, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করেছিল। আমি ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করেছি। শুধু মসজিদই নয়, মন্দির ও প্যাগোডা, যখন যেখানে যেটা দরকার করে দিয়েছি। তিনি বলেন, তৃণমূলের জন্য পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক এবং প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। তারা তো এ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিদেশে যেতে পারে। কিন্তু এখনো দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ে। এগুলো খেয়াল রাখবেন। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে আপনাদের দাঁড়াতে হবে। কেউ যাতে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে না জড়ায়, সেটা আপনাদের দেখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ৩০ ধরনের ওষুধ দিই। চিকিৎসা ও ওষুধ মানুষ পায় কিনা একটু দেখবেন। এতে নজর রাখবেন।’ তিনি বলেন, ‘পিতা, মাতা, ভাই সব হারিয়েছি। বিদেশে আমি ও আমার ছোট বোনকে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। আমার ছোট বোন রেহানার পাসপোর্টটিও জিয়াউর রহমান দেয়নি। সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল, তবুও রিনিউ করে দেয়নি। নিরাপত্তার জন্য নিজের নাম ব্যবহার করতে পারতাম না। যারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করেছিল। আওয়ামী লীগের প্রতি ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন এবং তারাই আমার পরিবার।’